মুকেশ আম্বানির করোনার আগে প্রচুর ঋণ ছিল, যেটা তিনি দুই মাসেই শোধ করে দেন। তখন তার Net Worth ছিল $59B. অন্যদিকে, আদানির Net Worth ছিল $10B. অথচ, করোনার পর ঋণ বেড়ে গেল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, একইসাথে তার Net Worth বেড়ে হলো, $130B এরও বেশি।
কিন্তু, কীভাবে? আসুন জেনে নেই তাদের বিজনেস স্ট্র্যাটেজি, মিল এবং পার্থক্য।
শুরুর গল্প
মুকেশ আম্বানি
তাদের দুইজনের কিছু মিল রয়েছে। দুইজনই গুজরাটের, মুকেশ আম্বানির জন্ম ইয়েমেনে এবং গৌতম আদানির জন্ম গুজরাট। দুইজনের বয়সের পার্থক্য ৫ বছর, আম্বানি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন, অন্যদিকে আদানি স্কুল ড্রপআউট।
মহামারীপার্থক্য-০১
বিজনেস টাইপ
Reliance-এর শুরু আম্বানির বাবা ধিরুবাই আম্বানির মাধ্যমে। সেখান থেকে এই কোম্পানি তিনি আর তার ভাইকে দেওয়া হয়। আম্বানি একটি বিজনেস শুরু করে সেটি সফল হলে, তারপর অন্য একটি বিজনেসে যান। যেমন প্রথমে পেট্রোলিয়াম এবং পেট্রো কেমিক্যাল দিয়ে শুরু করে তারপর রিটেইল এবং টেলিকমিউনিকেশনে যোগ দেন। এখন আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি তার বিজনেস ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
আদানির শুরু Port এর কাজ দিয়ে। তারপর Logistics, Power Industry ইত্যাদি। গত কয়েক বছরে যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিজনেস হয়েছে, সব বিজনেস সেক্টরেই আছে আদানি গ্রুপের নাম।
কখনো কখনো এক সপ্তাহে তিনি তিন ধরনের নতুন বিজনেস শুরু করে দিতে পারেন।
যেমন, ২০২২ এর ১৩ই মে আদানি প্রিন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হন। তিনি Quintillion এর 49% শেয়ার কিনে নেন। Quintillion, The Quint মিডিয়ার বিজনেস সম্পর্কিত নিউজ পাবলিশ করে।
দুইদিন পর ১৫ মে, আদানি সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হন। ACC ও Ambuja কোম্পানির মাধ্যমে। একই দিনে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারে রূপান্তরিত হন। এরপর তিনি হেলথ ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হন Adani Health Venture Ltd. এর মাধ্যমে।
আম্বানির যেখানে একটি মাত্র কোম্পানি রিলায়েন্স লিস্টেড রয়েছে। সেখানে আদানির সাতটি কোম্পানির রয়েছে স্টক মার্কেটে যার মধ্যে কয়েকটি কোম্পানির মার্কেট ক্যাপ ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি।
পার্থক্য-০২
দ্বিতীয় পার্থক্য হচ্ছে যে রিলায়েন্সের কোন ধরনের ঋণ নেই। যেখানে আদানি গ্রুপের ঋণ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলারে ছাড়িয়েছে। মহামারীর এর আগে রিলায়েন্সের ২১ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ১ লাখ ৬০ হাজার কোটিরও বেশি ঋণ ছিল। সবাই যদিও ব্যাপারটি নিয়ে চিন্তিত ছিল, কিন্তু আম্বানি সবাইকে নিশ্চয়তা দিয়েছিল যে এক বছরের মধ্যে তিনি ঋণ শোধ করে দিবেন।
তিনি JIO প্লাটফর্মের মাধ্যমে ফান্ডি় কালেক্ট করা শুরু করেন এবং দু মাসের মধ্যে 24.7% স্টক JIO প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি যেমন ফেসবুক, গুগল এদের কাছে বিক্রি করে দেন।
একই সাথে, ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম বার রিলায়েন্স তার ৫৩ কোটি টাকার রাইট ইস্যু নিয়ে আসে 20 মে। যা খুব ভালো সাড়া পায়। এবং এর মধ্য দিয়ে মাত্র দুই মাসে তিনি তার সকল ঋণ পরিশোধ করে দেন।
অপরদিকে আদানি গ্রুপ যখনই কোনো নতুন বিজনেসের মধ্যে যুক্ত হয়, সেই বিজনেসের জন্য লোন নিয়ে নেয়। যার জন্য তাদের ঋণের পরিমাণ শুধু বেরেই যাচ্ছে। কিছু রিপোর্ট দেখাচ্ছে, আদানি গ্রুপ বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে আছে। এবং সময়মতো যদি ঋণ পরিশোধ না করা হয় তবে কোম্পানি বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
পার্থক্য-০৩
ইনভেস্টর
তৃতীয় পার্থক্য হচ্ছে, আম্বানি দেশের বাইরের ইনভেস্টরদের দেশে আনে ব্যবসার জন্য। অপরদিকে, আদানি যেসব ইনভেস্টররা কোনো নির্দিষ্ট বিজনেস বা কোম্পানি থেকে বের হতে চাচ্ছে; তাদের সাথে যুক্ত হয়।
JIO-তে আম্বানি বাইরের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিরদেরকে যুক্ত করেছেন। তাদেরকে তিনি রাজি করিয়েছেন এবং বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, ভারত বিনিয়োগের জন্য একটি ভালো মার্কেট। এবং তার থেকে ভালো আর কোন কোম্পানি নেই ইনভেস্ট করার জন্য।
একই সাথে SilverLake, JIO প্লাটফর্মে ৬০০ মিলিয়ন ডলার স্টক কিনে ফেলে। তারপর তারা BB এর সাথে ও বিজনেস করেছে ইন্ডিয়ান ফুয়েল রিটেইলিং এর সাথে যুক্ত হতে।
অপরদিকে, Holcim কোম্পানি যখন ACC এবং Ambuja Cement থেকে বের হয়ে তাদের নিজেদের কোম্পানিতে গুরুত্ব দিতে যাচ্ছিল; তখনই সেখানে আদানি গ্রুপ যুক্ত হয়। Holcim এর সাথে ১০ মিলিয়ন ডলারের লোনের ডিল করা হয়। একইভাবে NDTV আর্থিক ক্ষতির মাঝে থাকলেও, আদানি গ্রুপ এর বিশাল পরিমাণ স্টক কিনে ফেলে।
পার্থক্য-০৪
আম্বানি B2C অর্থাৎ বিজনেস টু কনজ্যুমারে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। অপরদিকে, আদানি এখনো B2B অর্থাৎ বিজনেস টু বিজনেসে ফোকাস করছে। আম্বানির B2C বিজনেসে, তারা কাস্টমার ফোকাস বিজনেস যেমন JIO রিটেইলে মনোযোগ দিয়েছে। বিশেষ করে High Scalable Tech বিজনেসে তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এসব বিজনেসের নিজস্ব একটা ধারা রয়েছে, নিজস্ব একটা গতি রয়েছে। এটা কপি করা কষ্ট এবং মার্কেটে এর চাহিদাও থাকবে বেশি।
তারা সরকারের সাথেও কাজ করে। যেমন 5G নেটওয়ার্ক তারা পুরো দেশের ব্যবহারের জন্য কাজ করেছে। JIO প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন অ্যাপ, ফিচারও যুক্ত হচ্ছে।
আদানির বিজনেস স্ট্র্যাটেজি ভিন্ন। সরকার যখনই কোন বিজনেস সেক্টর চালু করে এবং প্রাইভেট কোম্পানিকে ইনভাইট করে, তখন সবার আগে সেখানে বিডিংয়ে আদানি কোম্পানি যুক্ত হয়। যেমন আদানি Port, Road, Airport ইত্যাদি। তামিলনাড়ুতে কপার প্ল্যান্ট সরকার বন্ধ করে দিলে, আদানি কোম্পানি এই বিজনেসে যুক্ত হয় এই ভেবে যে ভারতে কপারের ঘাটতি হতে পারে। এরমধ্যে ৬০০০ কোটি টাকার লোনেরও ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে বলতে হয়, তাদের বিজনেসে অনেক পার্থক্য রয়েছে। সময়ের সাথে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত, আদানি এগিয়ে আছে। তবে আম্বানি যদি তার বাকি কোম্পানিগুলোও লিস্টেড করে, তবে এই সমীকরণও বদলে যাবে।