কখনও মনে হয়েছে, যে ব্যাগ অনায়াসে ১০০০ টাকা দিয়ে কিনতে পারবেন, তা কেন কেউ ৫০,০০০ টাকা দিয়ে কিনছে?
আপনার তাদেরকে বোকা বলে মনে হতেই পারে। কিন্তু আপনি জানেন কি, বেশিরভাগ লাক্সারি ব্র্যান্ড এসবই করে? অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যে তারা তাদের প্রোডাক্ট বিক্রি করে এবং পুরো দুনিয়ার মানুষ তা খুশি মনে কিনে বাড়ি ফিরছে।
Gucci এই ক্ষেত্রে বিখ্যাত। আজকে আমরা বোঝার চেষ্টা করবো, কীভাবে Gucci এতো জনপ্রিয় হলো? এর ইতিহাস এবং কোন কোন স্ট্র্যাটিজি ব্যবহার করে সে বিখ্যাত হলো?
ইতিহাস
Gucci -এর প্রতিষ্ঠাতা হলেন Guccio Gucci। তার জন্ম ২ মার্চ, ১৮৮১। তার বাবা ফ্লোরেন্সে একজন লেদার ক্রাফটসম্যান হিসাবে কাজ করতেন। তিনি টিনএজে যখন ছিলেন, তখন একটি হোটেলে এলিভেটর বয় হিসাবে কাজ করতেন। তিনি সেখানে খেয়াল করেন, ধনী ব্যক্তিদের কত বাহারি ঢংয়ের ব্যাগ, লাগেজ, এক্সেসরিজ রয়েছে। এসব তিনি গভীর মনোযোগ দিয়ে স্টাডি করেন।
কিছুদিন পর, তিনি তার বাবার সাথে কাজ করা শুরু করেন এবং নিজের প্রোডাক্ট সেল করা শুরু করেন। তিনি ঘোড়ার জন্য স্যাডেলও বানান। তার প্রোডাক্ট কোয়ালিটি এতো ভাল ছিল যে, অচিরেই তা অনেকের নজরে আসে।
ধীরে ধীরে নিজের কাজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে, তিনি নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করেন এবং নাম দেন-House of Gucci.
বিজনেস খুব ভাল চলছিল এবং তার পাঁচ সন্তানও তার সাথে যোগ দেন। কয়েক বছর পর তার বড় ছেলে Aldo Gucci-এর পরামর্শে ১৯৩৮ সালে রোমে একটি স্টোর চালু করেন তারা। তাদের বিজনেসের যথেষ্ট উন্নতি হচ্ছিল। ১৯৫১ সালে তারা মিলানে একটি স্টোর খোলেন।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এর দুই বছর পর Guccio Gucci মারা যান। এরপর বিজনেস চলে যায় তার সন্তানদের কাছে। তারা এতে সফলতার পরিচয় দেয়। Guccio Gucci-এর মৃত্যুর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে তারা নিউইয়র্কে আরেকটি স্টোর চালু করে। সেখানেও তারা প্রচুর সাড়া পায়। এমনকি, জ্যাকি কেনেডি ও (জন কেনেডির স্ত্রী) তাদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করা শুরু করে।
সবকিছু ঠিকই চলছিল, কিন্তু ১৯৯০-এর দিকে ভাইদের মধ্যে প্রচুর বিরোধ দেখা যায়। সবাই ভাবতে থাকে, Gucci হয়তো তার ইনোভেশন ক্ষমতা হারিয়েই ফেলেছে। কিন্তু, গল্পের এই পর্যায়ে আসে টুইস্ট।
Gucci ১৯৯৪ সালে তাদের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসাবে নিযুক্ত করে Tom Ford-কে। তার নেতৃত্বে Gucci টপ লাক্সারি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়। তিনি Gucci-কে জনপ্রিয় করতে ব্যবহার করেন Sex Instinct- human’s primal instinct. এতে অন্যান্য কম্পিটিটররাও চমকে যায়। তাদের পোশাকের ডিজাইনেও পরিবর্তন আসে।
তাদের ক্লাসিক পোশাকের পাশাপাশি, ট্রেন্ড বেসড পোশাকও থাকে। ফলে তাদের সেলস ৯০% বেড়ে যায়। এরপর Gucci ব্র্যান্ড হিসাবে এতো বিখ্যাত হয়ে যায় যে, অনেক মিউজিশিয়ান তাদের গানের লিরিক্সেই Gucci-এর নাম ব্যবহার করা শুরু করে, তাদের পোশাক পরে।
Gucci মানুষের ৭টি Instinct-কে টার্গেট করে কাজ করে।
Making Customers Important
Gucci-এর প্রতিটি স্টোর অনেক সুন্দর করে গোছানো। সেখানে গেলেই তাদের সেলস পারসনরা আপনাকে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করবে, আপনার নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। অর্থাৎ তারা আপনাকে কমফোর্টের সাথে গুরুত্বপূর্ণ অনুভব করার অভিজ্ঞতাও দিবে।
Perceived Value
একই জিনিস ৫০০ টাকা আর ৫০০০ টাকার হলে, আপনার মনে হবে ৫০০০ টাকারটাই বেশি ভাল। এটা হিউমেন নেচার। এই বিষয়টি Gucci তাদের প্রোডাক্টে ব্যবহার করে এবং এমন আকাশচুম্বী মূল্য নির্ধারণ করে।
Using Biases
প্রতিটা মানুষই তার কাজের একটি ভ্যালিডেশন চায়। সে কাজটি ঠিক করেছে এই নিশ্চয়তা। এতো দামি প্রোডাক্ট কেনার পর তারা নিজেদের বোঝানোর চেষ্টা করা তারা ঠিক কাজ করেছে এবং তারা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ।
Superior Feeling
যেহেতু Gucci একটি জনপ্রিয় এবং দামি ব্র্যান্ড, যারা এর প্রোডাক্ট ব্যবহার করে তাদের শুধু ফ্যাশনেবলই নয়, খুব ধনীও ভাবা হয়। তাই তারা সহজেই অন্যদের থেকে আলাদা হয় এবং অন্য এলিটদের সাথে মেশার এবং নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ পায়।
Influencing Charm
৯০-এর দশকে Gucci মিউজিসিয়ানদের মাধ্যমে তাদের পাবলিসিটি করে। অনেক মিউজিশিয়ান তাদের নামও Gucci রেখে দেয়। তাদের মিলিয়ন ফলোয়ারদের মধ্যে Gucci এর পোশাকের কথা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, সঠিক কাস্টমারদের কাছে সহজেই তাদের প্রচারের কাজ হয়ে যায়।
Understanding Customers
প্রতি বছর Gucci মিলিয়ন ডলার খরচ করে তাদের কাস্টমারদের চাহিদা বোঝার জন্য। কাস্টমাররা কী চায়, তাদের কী পছন্দ, কী ট্রেন্ড, কোন ধরনের পোশাকে তারা স্বাচ্ছন্দ্য খুঁজে পাবে এসব জানার জন্য তারা প্রচুর শ্রম এবং অর্থ ব্যয় করে। আপনি যদি এমন পোশাক পান, যাতে আপনি নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারবেন তবে তো তা আপনার আরাধ্য বস্তুতে পরিণত হবে।
It is Rare
এটা মানতেই হবে যে, আমরা সবাই রেয়ার জিনিস পছন্দ করি। এমন কিছু যেটা অন্য কারো কাছে নেই। Gucci এই কাজটাই করেছে। তাদের আকাশচুম্বী দামের জন্য এটা নির্দিষ্ট কিছু মানুষের কাছে পৌঁছায়। আবার তারা কখনো দাম কমায়ও না, যাতে এই ব্যবস্থা বজায় থাকে। আর যারা তাদের প্রোডাক্ট কিনতে পারবে না, তাদের মাঝে একটা অতৃপ্তি থাকবে। ফলে, দুইভাবেই তাদের লাভ হচ্ছে।
মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি
এমনকি, Gucci তাদের যেসব প্রোডাক্ট বিক্রি হয়নি তা ডিস্কাউন্টেও বিক্রি করে না বা ডোনেট করে না। সরাসরি পুড়িয়ে দেয় যাতে তাদের প্রোডাক্টের ভ্যলু অটুট থাকে। যেহেতু শুধু High Network Individual তাদের টার্গেট কাস্টমার, তাই তারা যখন এই প্রোডাক্ট ব্যবহার করে তা এমনিতেই একটি মার্কেটিং হয়ে যায়। মানে তারা একটি চলন্ত বিলবোর্ড হিসাবে ব্যবহার হয়।
একই সাথে, তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের কাস্টমারদের সাথে ইন্টার্যাক্ট করে। আজকাল তো Meme Marketing ও চালু করেছে তারা। এমনকি slang হিসাবেও Gucci শব্দের ব্যবহার আছে। Gucci শুধু কোয়ালিটি বা অভিনবত্বের জন্য নয়, সঠিক সময়ে সঠিক মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি, মানুষের স্বভাব এবং অভ্যাসের ব্যবহার এবং লয়েল ও নির্দিষ্ট কাস্টমারদের জন্য এতদূর আসতে পেরেছে।