যতই দিন যাচ্ছে সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং ততোই প্রতিযোগীতাপূর্ণ হচ্ছে। আর পেইড মার্কেটিং খুব নাটকীয় ভাবে খেই হারিয়ে ফেলছে। প্রত্যেকটি প্লাটফর্মই চায় আপনি তাদের মিডিয়ায় খরচ করুন। যাই হোক; অর্গানিক উপায়ে সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং এর সময় কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। আমার মতে অর্গানিক মার্কেটিং, পেইড মার্কেটিং এর সাথে সাথে করাটা প্রয়োজন।
তবে হ্যা তার জন্য আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে, একটু ভিন্ন, একটু ইনোভেটিভ কিছু ভাবতে হবে। চিন্তার লাইন যদি আপনি আউট অফ সিলেবাস রাখতে পারেন তবেই আপনি অর্গানিক মার্কেটিং নিয়ে অনেক দূর আগাতে পারবেন। আপনার কাজকে একটু সহজ করতে আমি শেয়ার করছি কিছু টিপস আর ট্রিকস যার দ্বারা আপনি অর্গানিক সোশাল মিডিয়া মার্কেটিংকে কাজে লাগিয়ে আপনার বিজনেস কে একটি নতুন মাত্রা দিতে পারেন।
সময় বুঝে পোস্ট
সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট লাইভ হবার আধ-ঘন্টার মধ্যেই বোঝা যায় এটি কেমন এঙ্গেজমেন্ট করাতে পারবে। কারন একটি পোস্ট যতো দ্রুত এঙ্গেজমেন্ট তৈরী করতে পারে সোশাল মিডিয়ার এলগোরিদম সেই পোস্টটিকে ততোই পছন্দ করে আর ততোধিক মানুষের কাছে পোস্টটি পৌছে দেয়।
ইন্সটাগ্রামকে উদাহরন হিসেবে ধরা যাক, তাদের এলগোরিদম তিনটি স্টেপে কাজ করে।
স্টেজঃ১: আপনি ইন্সটাতে যখন কোনো পোস্ট করবেন, এর এলগোরিদম আপনার অডিয়েন্সের মধ্যে কিছু অডিয়েন্সের কে পোস্ট টি শো করবে, আর সেই সাথে মনিটর করবে এই পোস্ট টি কেমন এঙ্গেজমেন্ট পাচ্ছে।
স্টেজঃ২: দ্বিতীয় ধাপে ইন্সটাগ্রাম একই সময়ে যতগুলো নতুন পোস্ট এসেছে তাদের মধ্যে
এঙ্গেজমেন্ট এর লেভেল কম্পেয়ার করে।
স্টেজঃ৩: তৃতীয় এবং সর্বশেষ ধাপে ইন্সটা এলগোরিদম, ডিসিশন নেয় কোন ছবিটিকে তারা অধিকাংশ অডিয়েন্সেকে দেখাবে। আর পোস্টটি যদি ক্রমাগত এরকম এঙ্গেজমেন্ট ধরে রাখতে পারে তবে এটি অনেক মানুষের ফিডে টপে থাকে। আর ফোটো বা ব্র্যান্ড পেজের তাতে এক্সট্রা রিচ বা এঙ্গেজমেন্ট ও হয়।
আর এই এলগোরিদম প্রত্যেক সোশাল মিডিয়ার জন্য প্রায় একই। কারন তিন বিলিয়ন সোশাল একাউন্ট নিয়মিত পোস্ট করছে, আর বিশাল এই সংখ্যার সাথে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হলে পোস্ট করার সাথে সাথে রিচ পাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
বোনাস টিপস: সোশাল মিডিয়ার এলগোরিদমকে বোঝাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এটিই সোশাল মিডিয়ার ফান্ডামেন্টাল হিসেবে বিবেচিত। তাই আপনি যে মিডিয়া-ই ব্যবহার করেন না কেন আপনাকে সেটার এলগোরিদম খুব ভালেভাবে বুঝতে পারতে হবে।
আউটবাউন্ড লিংক পরিহার
এখন সময় একটু বেশী হ্যাকি হবার। যেহেতু আপনি আপনার পোস্টটিকে দ্রুত র্যাংক করাতে চান তাই আপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রিকস হলো আউটবাইন্ড লিংক একদম এভোয়েড করা। কারন টা ব্যাখ্যা করি; সব সোশাল মিডিয়াই চায় আপনি তাদের প্লাটফর্মকেই বেশী ব্যবহার করেন। সাধারন ভাষায় বলতে গেলে তারা আপনার পোস্ট কে বেশী ইম্প্রেশন দিয়ে আরো বেশী টাকা ইনকাম কতে চায়। তাই এটা তারা পছন্দ করে না যে আপনি আপনার ওয়েবাসইট বা অন্য কোনো মিডিয়ার লিংক দিয়ে অডিয়েন্সে কে সেখানে টেনে নিতে চাচ্ছেন। বাট!!
এখানেও একটা বাট আছে; আপনি সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলো ব্যবহার করছেনই তো আউটবাউন্ড লিংক ব্যবহারের জন্য তাইনা? যেমন ধরুন লিংকডইন, লিংকডইনে আমরা আউটবাউন্ড লিংক ব্যবহার করতে চাইলে সেটা কিভাবে করবো? লিংকডইন একটি পোস্ট পাবলিশ করার জন্য দুইটি ব্যাপার এলাউ করে।
১ঃ লিংকডইন পূর্বে পাবলিশকৃত পোস্ট কে এডিট করার সুবিধা দেয়।
২ঃ লিংকডইন স্পেসিফিক কমেন্টে আউটবাউন্ড লিংক দেয়ার সুযোগ দেয়।
তাহলে এই দুটি সুযোগকে আমরা কিভাবে কাজে লাগাতে পারি? আপনি পোস্টের মেইন বডিতে আউটবাউন্ড লিংক না দিয়ে, সেটা পাবলিশ করার পর প্রথম কমেন্টে আউটবাউন্ড লিংক টি দিতে পারেন। আর তারপর এই কমেন্টের লিংক টি আপনি আপনার পোস্টের মেইন বডি তে পেস্ট করতে পারেন। এই ট্যাকনিক ফলো করে ১ থেকে ২০০% রিচ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। এরকম কুল একটি ট্রিকস কি আপনি জানতেন, বলুন তো।
বোনাস টিপস: আউটবাউন্ড লিংক গুলো কে মাস্ক পড়িয়ে রাখতে পারাটাও একটা মজার ব্যাপার, আর Rebrandly এই টুলটির মাধ্যমে আপনি এই কাজটিই করতে পারবেন সহজে। এর ফলে আপনি তিনটি উপকারীতা পাবেন তা হলো
উপকারীতা ১ঃ টুল ব্যবহারের ফলে পোস্ট গুলো অনেক সুন্দর আর ব্র্যান্ডেবল দেখায়।
উপকারীতা ২ঃ মেট্রিক্স গুলোকে আরো বেশী ট্র্যাক করার জন্য ClickMeter বেশ ভাল একটি টুল। এর দ্বারা একটি পোস্টে কেমন ক্লিক আসছে এর একটা হিসাব রাখা যায়। যেমন: ভৌগোলিক অবস্থানের প্রেক্ষিতে আসা ক্লিক এবং কোন প্লাটফর্ম থেকে কতো ক্লিক আসছে তা নিয়ে একটি সম্যক ধারনাও পাওয়া যায়।
উপকারীতা ৩: আপনি ব্র্যান্ডেড লিংক গুলোতে রিটার্গেটিং পিক্সেল করতে পারেন। এটি আপনাকে রিলেভেন্ট কন্টেন্টে আগ্রহীদের কাছে আপনার এডস বিক্রি করতে সাহায্য করবে।
সাব্জেক্ট লাইন ট্রিকস
আপনি কি ই-মেইল মার্কেটিং এ সাব্জেক্ট লাইন ট্রিকস প্রয়োগ করেছেন কখনো? সিম্পলি বলতে গেলে ইমেইল ক্যাম্পেইন এর সময় যে মেইল গুলো ওপেন করা হয়নি সেগুলোই আবার ভিন্ন সাব্জেক্ট লাইন নিয়ে সেন্ড করা। এটি মেইল ক্যাম্পেইন এর পারফর্মেন্স অনেক বাড়িয়ে দেয়। এই ট্যাকটিক টি প্রয়োগের ফলে মেইল ওপেন রেইট প্রায় ২৫% বাড়ানো যায়।
নিশ্চয় আপনি ভাবছেন এই ট্রিকসটিকে আপনি সোশাল মিডিয়ায় কিভাবে কাজে লাগাবেন, তাইনা? এটি কিন্তু সোশাল ডিস্ট্রিবিউশন এর হ্যাকও বটে। এর মাধ্যমে আপনার কন্টেন্ট গুলোতে রিচ বেশ আনা তো যাবেই সেই সাথে একে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায় প্রসারের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
যেহেতু অনেক সময় ব্যয় করার পর আপনি অসাধারন ব্লগ পোস্ট বা লেন্ডিং পেইজ তৈরী করেছেন, সে হিসেবে আপনি চাইবেন যত বেশী সম্ভব অডিয়েন্সর কাছে এটি পৌছানো যায়। কিন্তু বার বার একটি পোস্টকে শেয়ার করা ব্যাপারটা সোশাল এলগোরিদম ভালো চোখে দেখে না। কিন্তু আপনি ওল্ড কন্টেন্ট কে নতুন লুকে তৈরী করে নিতে পারেন। আর সেটা কিভাবে? মেটাডাটা পরিবর্তনের মাধ্যমে।
অনেক ব্লগিং প্লাটফর্ম এবং ল্যান্ডিং পেইজ এই অপশনটি ব্যবহারের সুযোগ দেয়। যেমন ওয়ার্ডপ্রেসের “ইয়স্ট”। অনেকটা মেইল এর সাব্জেক্ট লাইন পরিবর্তনের মতোই আপনি আপনার কন্টেন্ট এর মেটাডেটা পরিবর্তন করে আপনার অডিয়েন্সের কাছে পৌছাতে পারেন নতুন সেগমেন্টে। আর আপনি হয়তো চিন্তাও করেন নি যে এই পোস্টটি ই এবার ভাইরাল হয়েও যেতে পারে।
সোশাল মিডিয়া কুইজ
ইন্জিনিয়ারড মার্কেটিং নিয়ে যদি বলি, আইডিয়াটা হলো ফ্রি তে ভ্যালুয়েবল কিছু অডিয়েন্সকে দেয়া আর তার বদলে সেই রিলেটেড কিছু বিক্রি করা। আর সোশাল মিডিয়া কুইজে ঠিক এই ব্যাপারটাই কাজ করে। অনেক রিসার্চেই দেখা গিয়েছে নরমাল কন্টেন্ট এর চেয়ে কুইজ গুলো বেশী জনপ্রিয়তা পায়। কারন একটি কুইজ ৫০ হাজারের ওপরে লাইক-শেয়ারও পেতে পারে যেখানে একটি আর্টিকেল পায় মাত্র ১৫ হাজার বা কিছু বেশী। একে বলে সোশাল কারেন্সি।
ইভেন, লিড জেনারেশন এর জন্যও কুইজ অনেক ভাল আউটপুট নিয়ে আসতে পারে। তবে হ্যা আপনাকে অবশ্যই রিলেটেড কোন প্রশ্নই করতে হবে। আর সঠিক টুলের সাহায্যে কুইজ বানানো খুব সহজ। কুইজ তৈরীর জন্য outgrow.co বা typeform.com এই দুইটি টুল ব্যবহার করতে পারেন।
কসভারসেশনাল পোস্ট
প্রায় সব সোশাল নেটওয়ার্ক ঘোষনা দিয়েছে তারা ঐসব পোস্ট কে ফেবার করবে যেগুলো মিনিংফুল এবং কনভারসেশন টাইপ। কারন প্রত্যেকটি মিডিয়াই চায় তাদের ইউজারদের বেটার এক্সপেরিয়েন্স দিতে যেনো তারা আরো বেশী সময় সেসব প্লাটফর্ম এ কাটায়। আর তাই তারা পেইজ এর পোস্ট রিচ গুলো এখন আর ফ্রেন্ড বা ফেমিলির বদৌলতে রিচে হবে এমন সুবিধা দেয়না।
যেমন দেখুন ফেসবুক ইদানিং বলেছে সামনের কিছু মাসে তারা এমন আপডেট আনবে যাতে করে সেসব মানুষরা র্যাংকে থাকবে যাদের পোস্ট সাধারন মানুষকে ইন্টারেক্ট করতে পারে বেশী। আর মার্ক জুকারবার্গ নিজেই বলেছেন মানুষ যতো সময়ই ফেসবুকে কাটাক না কেন সেই সময় টা যেনো অডিয়েন্স সৃজনশীল ভাবে ব্যয় করতে পারে তার দিকেই লক্ষ রাখবে ফেসবুক।
তাই মার্কেটার হিসেবে আপনাকে কন্টেন্ট এর ব্যাপারে আরো স্মার্ট হতে হবে। কন্টেন্ট এ কনভারশেসনাল হওয়াটা এখন সময়েরই দাবী। বাট, কনভারসেশন তো যেকেউ শুরু করতে পারে, কনভারসশন কে টেনে বড় করতে পারে। তবে আপনি কনভারসেশন শুরু করবেন আপনার কন্টেন্ট কে নিয়ে। আপনাকে কপিরাইটিং এর ব্যাপারে আরো বেশী ক্রিয়েটিভ হতে হবে। আপনাকে এমন পোস্ট লিখতে হবে যেটা মানুষকে কথা বলাবে বা কমেন্ট করাতে বাধ্য করাবে। যেমন
১ঃ আপনি পোস্টে একটি প্রশ্ন করতে পারেন, এতে আপনার অডিয়েন্সের পছন্দ অপছন্দ ও অনেকটাই উঠে আসবে।
২ঃ আবার আপনি কোনো টপিকে তাদের মতামত জানতে চাইতে পারেন।
৩ঃ এছাড়াও ট্রেন্ডিং কোনো টপিক নিয়ে ডিসকাশন শুরু করতে পারেন।
সঠিক কন্টেন্ট মিডিয়াম ব্যবহার করাটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। ফেসবুকের নিউজফিড হেড বলেছেন লাইভ ভিডিও গুলোতে কনভারসেশন এর পরিমাণ অনেক বেশী হয়। রেগুলার ভিডিওর চেয়ে লাইভ ভিডিওতে ইন্টারেকশন হয় প্রায় ছয় বার বেশী। আর হ্যা কনভারসেশনাল হবার বেসিক টাই হলো অলওয়েজ অডিয়েন্সের রেস্পন্স পাওয়া।
ভিডিও মার্কেটিং
সমস্ত ওয়েব ট্রাফিক এর মধ্যে ৮০% হলো ভিডিও ভিউয়ার। মজার একটি সমীক্ষায় দেখা যায় ইউএস টেলিভিশন নেটওয়ার্কে ৩০ বছরে যে ভিডিও তৈরী হয়েছে ঠিক সমতূল্য ভিডিও কন্টেন্ট বর্তমানে প্রতি ৩০ দিনে আপলোড করা হয়। এমনকি স্ন্যাপচ্যাট এর মতো অর্ধমৃত মিডিয়াও প্রতিদিন ১০ বিলিয়ন ভিউ পায় শুধু ভিডিও থেকে।
আর শতকরা ৬০ ভাগ ভিডিও ই করা হয় মোবাইল ফোন থেকে। তাই আপনি চোখ বন্ধ করে মোবাইল ফোনের ভিডিও দিয়ে আপনার ব্র্যান্ড কে পরিচিত করে তুলতে পারেন। কিন্তু আপনি, আমি সবাই জানি যে ভিডিও মার্কেটিং এর এন্ট্রি তেই অনেক বাধা আসে। যেহেতু বড় কোম্পানি গুলো ভিডিও এক্সপার্ট হায়ার করে, তাহলে ছোট কোম্পানি গুলো কি করবে, তার জন্য আপনি বেশ কিছু টুলস ব্যবহার করতে পারেন; যেমন: Animoto, WAV, বা keynote।
বোনাস টিপ: ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম ফিড এর জন্য আপনি স্কোয়ার আকৃতির ভিডিও তৈরী করুন আর ইন্সটাগ্রাম স্টোরি, ফেসবুক স্টোরি বা স্ন্যাপচ্যাট এর জন্য তৈরী করুন ভার্টিকাল শেপের ভিডিও।
আপনার যদি ভিডিও কন্টেন্ট নিয়ে তেমন নতুন কোন আইডিয়া না থাকে তাহলে আপনি আপনার আগের পোস্ট গুলোর ভিডিও করে তারপর আপলোড করে দেখতে পারেন, একটি নতুন এক্সপেরিমেন্টও হয়ে যাবে। Lumen5 নামের এই এআই টুল টি আপনার আর্টিকেল গুলো কে শর্ট ভিডিও বানিয়ে দিবে।
সেইসাথে ভিডিও গুলো কে ন্যাটিভলি পোস্ট করুন, যেমন আগে ভিডিও টিকে সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করুন তারপর সেটি পোস্ট করুন। আবার আপনি চাইলে টু-উইক রুল ফলো করতে পারেন। একটি ভিডিও তৈরীর পর সেটার লিংক সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করুন আর দুই সপ্তাহ পর যখন ভিডিওর ভিউ একটু কমবে তখন ভিডিও টিকে সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করুন।
ইউটিউবে আপনার পন্য সম্পর্কিত কোন ভাল ভিডিও যদি আপনি শেয়ার করতে চান তবে সেটা আগে আপনার ডিভাইসে ডাউনলোড করুন আর তারপর আপনার সোশাল মিডিয়া পেজে নতুন করে আপলোড করুন (অবশ্যই তার আগে ভিডিও টির মালিকের পারমিশন নিয়ে নিন)।
S.T.E.P.P.S ফ্রেমওয়ার্ক
বৈজ্ঞানিকভাবে একটি পোস্ট কিভাবে ভাইরাল হয় তাই ব্যখ্যা করা হয় এই ফ্রেমওয়ার্কটিতে। Jonah তার বইতে আলোচনা করেছেন ঠিক কেন অল্প কিছু পোস্ট ভাইরাল হয়। একটু ভেবে দেখুন সোশাল মিডিয়ায় সবকিছুই ট্যাকনোলোজি আর স্ট্রেটিজির এর ওপর ভিত্তি করে হয় না, আপনাকে বুঝতে হবে কেন মানুষ অন্য একজনের পোস্ট কে বারবার শেয়ার করছে। তাহলে চলুন এই ফ্রেমওয়ার্কটি বুঝে নেই
সোশাল কারেন্সি: এই ফ্রেমওয়ার্ক এর প্রথম আর প্রধান পার্ট হলো সোশাল কারেন্সি। মানুষ সেই পোস্ট গুলোই শেয়ার করে যেগুলো তাদেরকে অন্যদের কাছে সুন্দর বা একটু আপডেট ভাবে প্রেজেন্ট করবে। আপনি লাস্ট সোশাল মিডিয়ায় কোন পোস্ট টি করেছিলেন একটু ভেবে দেখুন। এবার ভাবুন কেন আপনি এটি শেয়ার করেছিলেন? এটি কি আপনাকে স্মার্ট বা কুল দেখিয়েছিল?
তাই যখনি আপনি কোন পোস্ট করতে যাবেন একটু চিন্তা করবেন আপনাকে দিয়ে, আপনি যদি অডিয়েন্সের জায়গায় হতেন আপনি কি এটি শেয়ার করতেন? বার বার শেয়ার করে সোশাল কারেন্সি বাড়াতেন?
ট্রিগার: আমি কিন্ত লেটেস্ট ট্রেন্ড বা নিউজ শেয়ারের কথা বলছিনা। কারন এখানে কম্পিটিশন অনেক বেশী, আপনার মতো অনেকেই কিন্তু অলরেডি ট্রেন্ড নিয়ে কাজ করে ফেলেছে। তো আপনাকে এখন কারেন্ট ট্রেন্ড কে নিজের মতো ইউনিক ভাবে তুলে ধরতে হবে।
ইমোশন: আপনি কখনো খেয়াল করেছেন কিনা জানি না ভাইরাল পোস্ট গুলো অনেক ইমোশনাল হয়। তাই যখনি সোশাল মিডিয়ায় আপনি একটি পোস্ট করতে যাচ্ছেন ভেবে নিবেন এটি কেমন ইমোশন তৈরী করতে পারবে, মানুষকে ইন্সপায়ার করবে নাকি অবাক করবে; এটি কি ফানি নাকি রেগে যাবার মতো কোন পোস্ট, এটি কি কন্ট্রোভার্সি তৈরী করতে পারবে?
প্র্যাকটিকাল ভ্যালু: ইমোশন তৈরীর পাশাপাশি আপনাকে প্র্যাকটিক্যাল ভ্যালুর দিকেও নজর দিতে হবে। আপনার কন্টেন্ট থেকে মানুষ উপকার পাবে কিনা, বা পরবর্তীতে তথ্য গুলো সে ব্যবহার করতে পারবে এমন কন্টেন্ট আপনাকে তৈরী করতে হবে।
ইমোশন বা প্র্যাকটিকাল ভ্যালুর কথা যখন আসে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে কোনো ভাবেই ভুল কোন তথ্য তুলে ধরা যাবে না। ভাইরাল ১০ টি ফেসবুক কন্টেন্ট এর লিস্ট দেখুন সেখানে ইন্সপায়ারিং পোস্ট রয়েছে। সেই পোস্ট গুলো ভাইরাল কেন? কারন এগুলো এমন কন্টেন্ট যাতে ভরপূর ইমোশন এবং প্র্যাকটিকাল ভ্যালু আছে।
পাবলিক: সোশাল মিডিয়ার দুনিয়ায় সোশাল প্রুফ কিন্তু পাবলিকরাই। সোশাল প্রুফ হলো সোশাল মিডিয়ায় যা ভিজিবল, চোখে দেখতে পারছি এমন কিছু ( লাইক, কমেন্ট, শেয়ার)। অনেক সময়ই এমন পোস্ট চোখে পড়ে যা অনেক ভাল কিন্তু তেমন লাইক বা শেয়ার নেই; আবার এমন ভাইরাল পোস্ট চোখে পড়ে যাতে হয়তো তেমন ইউনিক কিছু নেই তাও ভাইরাল হয়েছে। এই ব্যাপার টা হওয়ার কারন সোশাল প্রুফ; একটি পোস্ট যখন আর্লি এঙ্গেজমেন্ট পায় তখন সমানুপাতিক হারে এটি মানুষের সামনেও আসতে থাকে আর ভাইরাল হয়।
ভিজুয়াল প্রেজেন্স
ভিজুয়াল বলতে শুধু ইমেজ বা ভিডিও দেয়াকেই বোঝায় না। ইমোজি, GIFs ব্যবহার করেও কিন্তু ইমোশন ড্রাইভ করা যায়। আর সেক্ষত্রে স্টক ফটো ব্যবহার না করাই ভাল। যদিও অনেক বিজনেসই স্টক ফটোই ব্যবহার করে। কারন সবার জন্য হাই-কোয়ালিটি ফোটোগ্রাফি তৈরী করে নেয়া তো সম্ভব না। তাই ছোট খাটো টুল যেমন ক্যানভা ব্যবহার করে আপনি দ্রুত ফেসবুক এড, ব্লগ ব্যানার, বা যেকোন সোশাল এসেট বানিয়ে নিতে পারেন।
শিডিউলিং টুলস ব্যবহার
সোশাল মিডিয়ায় প্রোডাক্ট লঞ্চ, কোম্পানি রোডম্যাপ, হলিডে, ইভেন্ট সবকিছুই শিডিউলিং টুলস এর মাধ্যমে শিডিউল করে নেয়া যেতে পারে। Hootsuite এবং Buffer দুইটি টুলস ই শিডিউল করে নেয়ার জন্য খুব ভালো। সোশাল মিডিয়া ক্যালেন্ডর ব্যবহারের মাধ্যমে আপকামিং সবকিছুর হিসাব রাখা যায় খুব সহজে।
ভ্যানিটি মেট্রিক্স
সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে আপনার গোল/উদ্দেশ্য কি? নিশ্চয় আপনার একটি ম্যাট্রিক্স আছে। আর ভ্যানিটি ম্যাট্রিক্স এর মাধ্যমে আপনি সোশাল স্ট্রেটিজি গুলো কেমন কাজ করছে, কতো গুলো চোখ আপনার পোস্টে পড়ছে তার সবই জানতে পারবেন।
আর আপনি যদি শুধু ব্র্র্যান্ড এওয়ারনেস ই চান তবে কন্টেন্ট রিচ কতো তা জানাটাই এনাফ। কিন্তু অনেকেই শুধু রিচ জেনেই ক্ষান্ত হননা। কারন কন্টেন্ট রিচ এর পাশাপাশি লিড জেনারেশনও তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনারা হার্ড মেট্রিক্স এবং সফট মেট্রিক্স দুইভাবে কাউন্ট করতে পারেন।
সফট মেট্রিক্স: সোশাল সোর্স থেকে পাওয়া পোস্ট রিচ, এঙ্গেজমেন্ট, সেশন ড্রিভেন ইত্যাদি গণনা করা।
হার্ড মেট্রিক্স: কোয়ালিফাইড লিড গুলো গণনা করা।
পরিশেষে
অর্গানিক সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং দিনকে-দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আর সাথে নতুন নতুন আপডেট তো আছেই। তাই বেস্ট প্র্যাকটিস হলো সোশাল এলগোরিদম ও আপডেট গুলো বুঝতে চেষ্টা করা, আর সেগুলো নিজের বিজনেসে পরীক্ষা করা। আশা করছি এই টিপস গুলোর মাধ্যমে আপনি ধারনা পেয়েছেন কিভাবে নতুন নতুুুুন ট্রিকস বের করে তা ব্যবসায়ে প্রয়োগ করা যায়। তাই আজ থেকেই টিপস গুলো কাজে লাগান আর আপনার বিজনেসে ভিন্ন মাত্রা যোগ করুন; বেস্ট অফ লাক।