জন্ম এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে। বাবা-মা কেউই লেখাপড়া জানতেন না। ছোটবেলায় মুখের এক অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। প্রচলিত পদ্ধতিতে পড়ালেখা শুরু করলেও, পরবর্তীতে যোগ দেন গুরুকুল পদ্ধতিতে, ইয়োগা, সংস্কৃত ইত্যাদি বিষয়ে। শিক্ষাজীবন শেষে সন্ন্যাসী হয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ইয়োগা ক্যাম্প পরিচালনা শুরু করেন তিনি।
বলছিলাম রামকৃষ্ণ যাদবের কথা, যিনি সকলের কাছে রামদেব নামে পরিচিত। রামদেবের নাম জড়িয়ে আছে ‘পতঞ্জলির’ মতো নামি ব্র্যান্ডের সাথে। যা ইউনিলিভার, ডাবুরের মতো বিখ্যাত কোম্পানিকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। বর্তমানে পতঞ্জলির রেভিনউ ৪ বিলিয়ন ডলার।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, রামদেব শুধুমাত্র এই কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। পতঞ্জলির পেছনের কারিগর হলেন আচার্য বালকৃষ্ণ, যিনি নিজেও বেশিদূর লেখাপড়া করেননি।
তাহলে, পতঞ্জলি কীভাবে এতো বিখ্যাত হলো? ভিডিওটি দেখলেই উত্তর পেয়ে যাবেন।
দ্রুত উত্থান
প্রথমেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, পতঞ্জলি এতো কম সময়ে কীভাবে এতো উন্নতি করলো? যার কারণ চারটি-
- FMCG বা দ্রুত চলমান ভোগ্যপণ্য, অর্থ্যাৎ সময়ের সাথে জনগণের চাহিদা বৃদ্ধি
- দেশি পণ্য
- আয়ুর্বেদিক
- বাবা রামদেবের ব্র্যান্ড ইমেজ
কিন্তু, এটা শুধু বাইরের চিত্র। বাস্তবতা একদমই ভিন্ন।
শুরুর গল্প
গল্পের শুরু ৯০ এর দশকের শুরুতে। রামদেব এবং বালকৃষ্ণ, তখন চ্যাবানপ্রাশ বানিয়ে সাইকেলে করে ঘরে ঘরে বিক্রি করতেন। তারা একই সাথে সারা দেশে ইয়োগা ক্যাম্প বানিয়ে ইয়োগাও শেখাতেন। পরবর্তীতে রামদেব ২০০২ সালে ‘সংস্কার টিভিতে’ ইয়োগা শেখানো শুরু করেন। দেখতে দেখতে, ২০০৬ সালে তিনি দেশে বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। সেলিব্রেটিরাও তার অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এভাবেই তারা দুইজন পরবর্তীতে ‘পতঞ্জলি’ কোম্পানি শুরু করেন।
ব্র্যান্ড মার্কেটিং
যেকোনো প্রোডাক্ট বেশি বিক্রি করতে চাইলে দরকার কাস্টমারের মাঝে আগ্রহ তৈরি করা এবং তাদের সাপোর্ট। একই সাথে প্রয়োজন কাস্টমারদের বিশ্বাস অর্জন। যেনো তারা ভাবে আপনি জানেন আপনি কী করছেন।
দ্বিতীয়ত, সময়ের সাথে প্রোডাক্টে ছোট ছোট পরিবর্তন বা উন্নতি করা। যাতে তাদের মাঝে আপনার নতুন প্রোডাক্ট নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়।
তৃতীয়ত, প্রোডাক্টের উপকারিতা দেখানো।
এরপর আসে কনসালটেশন। এর তিনটি অংশ।
- কাস্টমারের সমস্যা বের করা
- আপনার প্রোডাক্ট ছাড়া সমাধান পাওয়া যাবে না সেই ধারণা তৈরি করা
- সমাধান হিসাবে প্রোডাক্ট সেল করা।
চলুন দেখি, পতঞ্জলি কীভাবে এই মডেল ব্যবহার করছে।
পতঞ্জলি-কনজিউমার ফানেল
১। চিকিৎসালয় বা পতঞ্জলি ক্লিনিক – এখানে আয়ুর্বেদিক ডাক্তাররা ফ্রিতে আপনাকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন।
২। আরোগ্য কেন্দ্র-যেখানে ইয়োগা সার্ভিস দেওয়া হয়
৩। স্বদেশি কেন্দ্র– এখানে পতঞ্জলির প্রোডাক্ট সেল করা হয়
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আপনি পতঞ্জলির ক্লিনিকে যাচ্ছেন ফ্রিতে সেবা নিতে, সেখান থেকে যে সমাধান দেয়া হচ্ছে সেই প্রোডাক্ট গুলো শুধু পতঞ্জলির স্টোরেই পাওয়া যাচ্ছে। সাথে, ইয়োগা যোগ করতে আপনি যাচ্ছেন তাদের আরোগ্য কেন্দ্রে। আর তাছাড়া আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা সাথে ইয়োগাতে আপনার উন্নতি অবশ্যই হবে। আর এই ফুল সার্কেলের মাধ্যমে সময়ের সাথে পতঞ্জলির এই জনপ্রিয়তা।
জনপ্রিয়তা
পতঞ্জলির পণ্য বাজেট ফ্রেন্ডলি, কেননা এর ৮০% প্রোডাক্ট তাদের প্ল্যান্টে তৈরি হয় সেখানকার কৃষকদের থেকে আনা উপাদান দিয়ে। সহজেই যেকোনো দোকানে সব ধরনের প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। তাই মধ্যবিত্ত পরিবারে পতঞ্জলিই প্রথম পছন্দ। সেই সাথে, পতঞ্জলি আপনার প্রতিদিনের ব্যবহারের পণ্যও তৈরি করছে।
কিন্তু খেয়াল করলে দেখা যাবে, এর মাত্র ১% আয়ুর্বেদিক। তার মানে এই না যে, তাদের সব পণ্য খারাপ। তবে অবশ্যই, কাস্টমার হিসাবে আমাদের উচিত কিছু কেনার আগে যাচাই করে কেনা।