বর্তমানে বিজনেস ওয়ার্ল্ড এমন হয়ে গেছে যে এর সাক্সেস প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে কাস্টমারের কাছে পৌছানো এবং অডিয়েন্স কে কতটুকু প্রভাবিত করা যায় তার ওপর। একই সাথে কাস্টমার বিহ্যাভিওর বোঝা এবং তাদের পণ্যের প্রতি মোটিভেট করা বা তাদের সমস্যার সমাধান দেয়া বড় চ্যালেন্জ এর একটি হয়ে দাড়িয়েছে।
AI কে মার্কেটিং এসিসট্যান্ট বলা যেতে পারে, যা দ্রুত গতিতে কাস্টমার ডাটা গুলোকে একত্রিত করে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন স্ট্র্যাটিজি তৈরী করে। তাহলে জেনে নেয়া যাক AI মার্কেটিং এর প্র্যাকটিক্যাল কিছু ব্যবহার।
AI মার্কেটিং কি?
AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা এমন ভাবে ডিজাইন করা, যেন এটি হিউম্যান টাচ না নিয়েও মানুষের মতোই কাজ করতে পারে। সাধারণত AI “র-ডাটা” কে বেস ধরে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। থিওরিটিক্যালি বলতে গেলে AI বিভিন্ন “কি-ইনডিকেটর” সংগ্রহ এবং একত্র করে; যেমন- ক্রেতার ভৌগোলিক অবস্থান বা শপিং হ্যাবিট। ক্রেতা কোন ধরনের পণ্য সার্চ করছে সেই ডাটার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন মার্কেটিং ওয়ে টার্গেট করা হয় যেমন; এ্যাড, ই-মেইল ইত্যাদি ।
মানুষের সাথে AI এর প্রধান পার্থক্যটা হচ্ছে “দ্রুততার”। মানুষ যে কাজ কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা নিবে AI তা মাত্র কয়েক সেকেন্ডে করে ফেলতে পারে। তবে একেবারেই যে হিউম্যান টাচ প্রয়োজন নেই তা নয়। যেমন; কাস্টমাইজড মেসেজিং এর জন্য প্রথমেই একজন মার্কেটারকে ম্যাসেজটি লিখতে হবে এবং তারপর একে কাস্টমাইজ ও অটোমেট করতে হবে তার মানে AI টুল কে তার কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। কাজ বুঝে নেয়ার পর AI টুল তার কাজ খুব দ্রুত করে ফেলার জন্য তৈরী হবে। মূলত এই দ্রুততার জন্যই অধিকাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এখন AI মার্কেটিং এর দিকে ঝুকছে।
AI মার্কেটিং এর উপাদান
যতই দিন যাচ্ছে কাস্টমার দের এক্সপেকটেশন এবং চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার সেই সাথে কাস্টমার পণ্যের দাম এবং মানের দিকে লক্ষ্য না করে পণ্য বা পণ্যের বিক্রেতার সাথে তার ইমোশনাল এটাচমেন্টকে বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আর AI এই কাস্টমার বিহ্যাভিওর গুলোকে একত্র করে মার্কটিং সলুশ্যন বের করতে সাহায্য করে।
মেশিন লার্নিং
মানুষ যেমন অভিজ্ঞতা থেকে শিখে ঠিক তেমনি মেশিন লার্নিং, AI এবং এলগোরিদম ব্যবহার করে ডাটা সংগ্রহ করে এবং সেই ডাটা গুলোকে সমন্বয় করে নতুন তথ্য তৈরী করে আর সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহায়তা করে। পুরো প্রসেস টাই কম্পিউটার বেজড বলে এই সলুশ্যন গুলো হয় একদম একোরেট।
ডাটা এনালিটিক্স
প্রযুক্তির এই যুগে ডাটা সার্কুলেশন এর পরিমাণ আমাদের কারো অজানা নয়, আর একজন মার্কেটার হিসেবে আপনাকে বিশাল এই তথ্যের ভান্ডার থেকে উপকারী তথ্য গুলোকে আলাদা করে নিয়ে তা কাজে লাগাতে হবে; কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স বোঝার জন্য।
এই বৃহৎ ডাটাকে অর্গানাইজ বা এনালাইজ করার বিরক্তিকর কাজটি করে দেয় AI টুল গুলো। এই ডাটা ইনসাইট গুলো নির্ভুল ক্যাম্পেইন সাজানোতে যেমন সাহায্য করে তেমনি সাহায্য করে কাস্টমার এংগেজমেন্ট বাড়াতে।
AI প্লাটফর্ম
কোম্পানি গুলোর জন্য AI একটি কেন্দ্রীভূত প্লাটফর্ম যা ডাটা ম্যানেজ করে এবং বিভিন্ন টাস্ক কে অটোমেট করে ফেলে। সেক্ষেত্রে আমরা AI প্লাটফর্ম কে মার্কেটিং ইন্টেলিজেন্স বলে ও ডাকতে পারি যা আমাদের সাহায্য করে ডাটা-ড্রিভেন ডিসিশন নিতে।
মার্কেটিং এ AI প্লাটফর্ম এর ব্যবহার
অর্থনীতি, বিনোদন, চিকিৎসা, বাণিজ্য ইত্যাদি বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে AI ব্যবহার করা হয়। তাহলে দেখা যাক মার্কেটিং এ এর ব্যবহার কেমন..
রিয়েল-টাইম পার্সোনালাইজড অনলাইন এ্যাডস
যেহেতু AI এর কাজ এলগোরিদম এবং ডাটা ইনসাইট ভিত্তিক তাই এটি অনলাইন এড এর প্লেসিং অর্থাৎ কোন এড কোন ধরণের অডিয়েন্স এর কাছে পৌছানো হবে তা নির্ভুল ভাবে করতে পারে। AI টুল ঠিক কোন সময়ে; কোন অডিয়েন্স; কোন চ্যানেলে; সময় কাটাচ্ছে এবং তার ইন্টারেস্ট কোন সব পণ্যে; তা এনালাইজ করে বের করে আর ঠিক সময়মতো তা অডিয়েন্সের সামনে নিয়ে আসে।
পার্সোনালাইজ কাস্টমার এক্সপেরিয়েন্স
বিজনেসে লিড এবং কনভারশন বাড়ানোর জন্য AI পার্সোনালাইজড কাস্টমার ডাটা বের করে দিতে পারে। আমরা একটি ক্লথিং বিজনেস এর ওয়েবসাইটের উদাহরন যদি দেখি, ধরি একজন অডিয়েন্স একটি ওয়েবসাইটে ২০ মিনিট সময় ব্যয় করলো এবং বিভিন্ন প্রোডাক্টে ক্লিক করে সাইজ, কালার ইত্যাদি দেখলো। এখন এই অডিয়েন্স টি যদি উক্ত পণ্যটি কিনে ফেলে তাহলে তো বিক্রেতার কার্য সমাধা হয়েই গেলো আর যদি সে না কিনে এমনি ২০ মিনিট সাইটটি ঘুরে দেখে যায় তাতেও AI টুল যুক্ত বিজনেস এর লাভ রয়েছে। সেটা কিভাবে?
কারন AI, কাস্টমারের সাইটে কাটানোর পুরো সময়টাকে ট্র্যাক করে ফেলবে। তাতে করে কাস্টমারের চাহিদা সে বুঝতে সক্ষম হবে এবং কাস্টমারের পছন্দানুযায়ী তাকে আরো প্রোডাক্ট সাজেস্ট করবে। ইভেন কাস্টমারের টেস্ট এবং স্টাইল অনুযায়ী বাছাইকৃত পণ্যের কালেকশন দেখিয়ে তাকে মেইল করতে পারবে। আর এই স্ট্র্যাটেজি গুলো ফিউচার মার্কেটিং এ কনভার্শন বাড়াতে অনেক বেশী সাহায্য করবে।
চ্যাটবট
এখন বলবো AI ন্যাচারাল ভষা প্রসেসিং বা চ্যাটবট এর কথা। এটি একটি টাইম সেভিং আর কাস্টমার কেন্দ্রীভূত এপ্লিকেশন। এই বুদ্ধিমান ডিজিটাল এজেন্টটি কাস্টমারের প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেয় তার ডাটা হিস্টোরি থেকে, আর এই ডাটা হিস্টোরি টা তৈরী করা হয় রিয়েল কাস্টমারের করা কমন প্রশ্ন গুলো থেকে। এটি যেমন কাস্টমারের সময় বাচায় সেই সাথে অনেক জটিল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ফেলে সহজে।
বায়িং বিহ্যাভিওর
বায়িং বিহ্যাভিওর বোঝার জন্য দরকার হয় কাস্টমারদের বায়িং হিস্টোরি যাকে প্রিডিক্টিভ এনালিটিক্স ও বলা যায়। এটি মেশিন লার্নিং, এলগোরিদম, মডেল, ডাটাবেজ এর সমন্বয়। এই মার্কেটিং ইন্টেলিজেন্স টি মার্কেটারদের জন্য ক্যাম্পেইন সাজাতে এবং টার্গেট অডিয়েন্সদের বুঝতে অনেক বেশী সাহায্য করে।
AI কন্টেন্ট জেনারেশন
কন্টেন্ট ক্রিয়েশন এর জন্য AI একটি শক্তিশালী টুল। মেইল অটোমেশন থেকে শুরু করে সোশাল মিডিয়ার ক্যাপশন লিখা সব অটোমেশন এর মাধ্যমে করে ফেলা যায়। তবে হ্যা AI যতই এডভান্স হোক না কেন এটি কখনোই হিউম্যান রাইটার ও ডিজাইনার দের রিপ্লেস করতে পারবে না, তাই রাইটার এবং ডিজাইনার গণ, আপনাদের প্যানিক হবার কোন কারণ নেই। আপনারা একে ব্যবহার করে আরো বেশী দ্রুত আইডিয়া এক্সপ্লোর করতে ও কিওয়ার্ড জেনারেট করতে পারেন।
ডায়নামিক প্রাইসিং
AI টুল এর মাধ্যেমে রিয়েল-টাইম পার্সোনালাইজেশন করা যায় বলে পন্যের চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে পণ্যের দাম নির্ধারন করা যায়। এর প্রিডিক্টিভ এনালিটিকস এর দ্বারা পন্য বা সেবার চাহিদা অনুমান করা যায় এবং ডাটা’র মাধ্যমে বিক্রয়মূল্য ঠিক করা যায়। আর যেসব পন্য কম বিক্রি হচ্ছে, সেই পণ্যের লিস্ট অনুযায়ী তাতে ডিসকাউন্ট দেয়া যেতে পারে; তাই একে আপনি দ্বিমুখী অস্ত্র ও বলতে পারেন।
স্পিচ রিকোগনিশন
গুগল এসিসটেন্ট কে তো আমরা সবাই চিনি কিন্তু এটি যে একটি কনভার্শনাল AI তা কি সবাই জানি (আমি কিন্তু জানতাম না)। এটি হলো ম্যাশিন লার্নিং এবং ন্যাচরাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেস এর সমন্বিত রূপ। এই AI গুলো মুখে বলা কোন শব্দ কে লিখিত রুপে নিয়ে আসে, যার ব্যবহার ২০২২ এ ২০০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। ২০০ মিলিয়ন অনেক বেশী, তাই না? আর হ্যা এর ব্যবহার যত বেশী মার্কেটার এর জন্য সুযোগ ঠিক তত বেশী।
পরিশেষে
মার্কেটিং ওয়ার্ল্ডে AI টুল গুলোর জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বাড়ছে। আর একজন দক্ষ মার্কেটার হিসেবে আপনাকে অবশ্যই স্রোতের সাথে সাথেই চলতে হবে। মার্কেট বদলের সাথে নিজেদের মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি ও পাল্টাতে হবে। কোম্পানি গুলোর এখনি ভেবে নেয়া উচিৎ আজ থেকে পাচ-দশ বা পনের বছর পরে AI নিয়ে তাদের প্ল্যান কি হবে। কারন AI মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি কে শেপ দিতে এবং কনজিউমার হ্যাবিট বুঝতে বৃহৎ আকারে কাজ করছে এমনকি ভবিষ্যতেও করবে।