বহুমূখী শব্দটি যেমন স্ত্রীজাতির সাথে সম্পর্কযুক্ত তেমনি মার্কেটিং বা বিপণন এর সাথেও সম্পর্কিত। যার মাধ্যমে একটি কোম্পানি একেক সময়ে, একেক ব্যবসায়িক উপাদানে ফোকাস করে। বর্তমানে বিজেনসগুলো, সোশাল মিডিয়ায় ফলোয়ার বাড়ানো থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট কনভার্শন বাড়ানো; এ ধরনের লক্ষ নিয়ে বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি তৈরী করে; এবং তাদের নিজস্ব মেথোডলজি ঠিক করে কাঙ্ক্ষিত রিভিনিউ অর্জনের দিকে ছুটে যায়।
ব্র্যান্ড মার্কেটিং কি?
সংক্ষেপে ব্র্যান্ড মার্কেটিং হলো পণ্য বা সেবা কে এমন ভাবে প্রমোট করা যাতে করে সামগ্রিক ব্র্যান্ড ইমেজ এর ভ্যালু বাড়ে এবং সেই সাথে তৈরী হয় কাস্টমারের সাথে দীর্ঘমেয়াদী একটি সম্পর্ক। আবার এটি পন্য বা সেবার গুণাবলীর গল্পগুলোকে এমন ভাবে তুলে ধরে যা পুরো ব্র্যান্ডের পরিচিতি অনেক বাড়িয়ে দেয়।
তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক, ব্র্যান্ড মার্কেটিং এর কিছু স্ট্র্যাটিজি এবং একে সফল করার কিছু টিপস।
তিনটি স্টেপে ব্র্যান্ড মার্কেটিং
ব্র্যান্ড মার্কেটিং কনসেপ্টটি অনেক ভীতিকর মনে হতে পারে যদি আমরা দৈত্যের মতো বিশাল কোম্পানি ( এ্যাপল, কোকা-কোলা নাইক) গুলোর ব্র্যান্ডিং এর সাথে নিজেদের ছোট কোম্পানিকে মিলাতে যাই। আসলে ব্যাপারটি এমন নয়। ব্র্যান্ড মার্কেটিং এর জন্য মোটেই বিগ বাজেট এর দরকার হয় না। শুরুটা শুরু করার জন্য আমরা তিনটি ইজিলি ফলো করার মতো স্টেপ প্র্যাকটিস করতে পারি।
ব্র্যান্ড এর উদ্দেশ্য যাচাই
একটি ব্র্যান্ড কেন পরিচালিত হচ্ছে এবং কী ধরনের পন্য বা সেবা অফার করছে; এই কি এবং কেন এর ক্লিয়ার-কাট উত্তর পাবার পরই আপনি ব্র্যান্ড মার্কেটিং স্ট্রেটিজির আরো গভীরে যাবার জন্য প্রস্তুত হবেন। ব্র্যান্ডের উদ্দেশ্য সহজে বের করতে নিমোক্ত প্রশ্ন গুলোর উত্তর বের করাই এনাফ।
ব্র্যান্ডের পেছনের গল্পটা? সব ধরণের কোম্পানির নিজস্ব একটি গল্প থাকে। একই পন্য বা সেবা বিক্রয়কারী কোম্পানির ব্র্যান্ডিং একই হলেও, এদের প্রত্যেকের থকে আলাদা আলাদা সত্তা, সেই হিসেবে পুরো জার্নি টার গল্প ও ভিন্ন, অথেনটিক যা ক্রেতার মন পেতে পারে সহজে। একটি গল্প; একটি কমিউনিকেশন স্টাইল, একটি ভিজুয়াল আইডিন্টিটি এবং সয়ংস্বম্পূর্ণ এবাউট পেইজ (ওয়েবসাইটের)। সেক্ষেত্রে বুঝতেই পারছেন আপনার ব্র্যান্ডকে নিয়ে আপনার গল্প এবং তা বলার ধরণ ব্র্যান্ডি মার্কেটিং এর জন্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার পন্য বা সেবা কোন সমস্যার সমাধান করে? একটি পন্য মার্কেটে আনার আগেই আপনাকে কাস্টমারের এই সংক্রান্ত সমস্যা গুলো অনুধাবন এবং এর পূর্ণাঙ্গ সমাধান নিয়েই আসতে হবে। আপনাকে খুজে বের করতে হবে আপনার পন্য বা সেবাটি কাস্টমারদের কোন সমস্যার সমাধান করবে।
কেন কাস্টমাররা অনেক অপশনের মধ্যে আপনাকেই পছন্দ করবে? এই ধাপটি কম্পিটিটর রিসার্চ এর সাথেও সম্পর্কিত। এত এত কম্পিটিশনের মধ্যে টিকে থাকতে হলে আপোকে অবশ্যই সবার থেকে ইউনিক হতে হবে। আপনাকে নিজের কাছেই ক্লিয়ার থাকেতে হবে কেন আপনি অন্য দশটি কোম্পানির চেয়ে বেটার।
আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কারা? ঠিক কোন ধরনের মানুষ আপনার আইডিয়াল কাস্টমারদের রিপ্রেজেন্ট করে এই প্রশ্নের উত্তর খুজে পেলে আপনি সহজেই টার্গেট মার্কেট কে চিহ্নিত করতে পারবেন এবং সেই সাথে পাবেন বায়ার পার্সোনার ব্যাপারে ধারনা।
ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরী
সমস্ত ভিজুয়াল ডিজাইনকে একত্রে ব্র্যান্ড ইমেজ বলা যায়, কারণ পরোক্ষভাবে ব্র্যান্ড ডিজাইন গুলোই ভোক্তাদের সাথে প্রাথমিক ভাবে কথা বলে। আমদের প্রথম স্টেপটির পর নিশ্চয় আপনি জানেন আপনার ব্র্যান্ড এর ব্যাপারে; কেন, কি এবং কিভাবে এর উত্তর। তাহলে ব্র্যান্ড ইমেজ এর উপাদান গুলো কি, চলুন তা জেনে নিই
বিজনেসের নাম: বিজনেস এর নাম হতে হবে সহজ কিন্তু শ্রতিমধুর। যেনো পণ্যের ব্যাপারে মনে হলেই কাস্টমার এর মাথায় ব্র্যান্ড এর নামটি ভাসে। যেমন: কেক এর নাম শুনলেই আমার মাথায় আসে টেস্টি ট্রিট এর নাম। আর এটাই টেস্টি ট্রিট এর ব্র্যান্ড মার্কেটিং।
ব্র্যান্ড লোগো: লোগো টা হতে হবে এমন ধরনের গ্রাফিক ডিজাইন যা গ্রাহক অনেক দূর থেকে দেখেও চিনতে পারবে।
ট্যাগলাইন/স্লোগান: ব্র্যান্ড এর পরিচয় এক লাইনে গ্রাহকের মাথায় চাপিয়ে দেয়ার জন্যই স্লোগান এর উদ্ভব। যেমন রবি সিম কোম্পানির নতুন স্লোগান ‘Life -এ নতুন এক্সপেরিয়েন্স’।
কালার’স: টার্গেট অডিয়েন্স এর চাহিদানুযায়ী ঠিক করতে হয় ব্র্যান্ড এর ব্যবহৃত থিম এবং কালার পেলেট।
ফন্ট’স: একটি ব্র্যান্ড এর ইমেজ অনুযায়ী রাখতে হয় টেক্সট ফন্ট বা টেক্সট স্টাইল গুলোকে।
পণ্য নয়, গল্প বিক্রি
ব্রান্ডিং এর সাথে ভোক্তাদের ইমোশনাল বন্ডিং অনেকটাই সম্পর্কিত। যেহেতু কাস্টমাররা ব্র্যান্ড টিকে ইমোশনালি ফিল করে তাই তারা ব্র্যান্ড এর গল্প শুনতে চায়। একটি কোম্পানি শুরুর গল্প থাকে, তাছাড়া একটি পণ্যের তৈরী থেকে শুরু করে তা ক্রেতার হাতে পৌছানো পর্যন্ত বিভিন্ন গল্প থাকে, এগুলো অডিয়েন্সের সাথে গল্পের আকারেই প্রচার করা গেলে ক্রেতার সাথে পণ্যের বন্ড খুব ভালো হয়।
ব্র্যান্ড মার্কেটিং এর রিয়েল এক্সাম্পল
Apple, McDonald’s এবং Nike তিনটি বিশালাকৃতির ব্র্যান্ড। পৃথিবীর খুব মানুষ হয়তো আছে যারা এই ব্র্যান্ড গুলো চিনে না। তারা এই পয়েন্টে পৌছলো কি করে? অবশ্যই কার্যকরী ব্র্যান্ড মার্কেটিং এর মাধ্যমে। সেগুলো কি?
Apple ব্র্যান্ড মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি
এ্যাপল এর ব্র্যান্ড মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি খুব সিম্পল, যদিও সিম্পল ব্যাপারকেই তারা উপস্থাপন করেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন দিকে। এ্যাপল তাদের ফোন বা ট্যাব গুলোর মার্কেটিং এমন ভাবে করে যেন তারা একটি সাধারন ফোন বিক্রি করছে না তারা বিক্রি করছে একটি নতুন লাইফস্টাইল। শুভ্র সাদা প্যাকেজিং, সেই সাথে উদ্দীপনামূলক ট্যাগলাইন, প্রোডাক্ট লঞ্চ এর সময় জাকজমক ইভেন্ট, সবকিছু দিয়েই তারা তাদের অডিয়েন্স এর মধ্যে ভালো একটা আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়।
McDonald’s ব্র্যান্ড মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি
আমেরিকা, ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়া বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে অনেক পরিচিত ম্যাক-ডোনাল্ড। ৬০ বছরের বেশী সময় ধরে তারা এই ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি ধরে রেখেছে। তাদের লোগো সেই শুরু থেকে এক ধরনের ই আছে আর মজার ব্যাপার হলো তাদের ট্যাগলাইন গুলো খুব কেয়ারিং সাউন্ড করে। যেমন
- You deserve a break today (1971-1975)
- That’s my McDonald’s (1981)
- Have you had your break today? (1995-1997)
- Smile (2001-2003)
- I’m lovin’ it (present)
Nike ব্র্যান্ড মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি
নাইক ব্র্যান্ডটি সবসময় স্টোরিটেলিং এর দিকে নজর দেয়, ওয়েবসাইট এর প্রোডাক্ট ডেস্ক্রিপশন, এমনকি সোশাল মিডিয়াতেও। একটি ব্র্যান্ড এর স্টোরিটেলিং সেই ব্র্যান্ড টিকে হিউম্যান টাচ দেয়। যেমন তারা পণ্যের বিবরণ এর নিচেই এর অরিজিন বা এর ডিজাইনের কথা গল্পের আকারে তুলে ধরে।
ব্র্যান্ড মার্কেটিং কখন সফল
ব্র্যান্ড মার্কেটিং নিয়ে আপনি একটি খেলায় নেমেছেন, আর এটা তখনি সফল বলে বিবেচিত হবে যখন আপনি রিপিটিটিভ বায়ার নিয়ে আসতে পারবেন। এক্সাম্পল হিসেবে নিতে পারি কোলগেট টুথপেস্ট কে, যা টুরিস্ট দের কাছে বহুল পরিচিত।
আর কোলগেট এর ব্র্যান্ড মার্কেটিং এর জন্য বেছে নিয়েছে তাদের গ্রাহকদের শিক্ষিত করাকে ( তাদের পন্য সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে জানানো, মোটেই কোন বোরিং ডিগ্রি না)। তারা একটি ওরাল কেয়ার সেন্টার তৈরী করেছে যেখানে আছে ওরাল হাইজিন নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও। তারা তাদের প্রোডাক্ট শুধু ক্রেতাদের কে গছাতে চাইছে না বরং তারা চাচ্ছে ক্রেতারা জেনে বুঝেই তাদের পন্য কিনুক।
ব্রান্ডিং এবং ব্র্যান্ড মার্কেটিং কি একই?
শুনতে একই শোনালেও ব্রান্ডিং এবং ব্র্যান্ড মার্কেটিং এর মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। সহজ ভাষায় বলতে গেলে ব্র্যান্ড মার্কেটিং হলো আপনি কিভাবে আপনার পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের এওয়ারনেস বাড়াচ্ছেন এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করছেন, অন্যথায় ব্র্যান্ডিং হলো আপনি কিভাবে আপনার বিজনেস কে অডিয়েন্স এর সামনে তুলে ধরছেন।
ব্র্যান্ডিং কে মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজির প্রাথমিক লেভেল ও বলা যেতে পারে। যেমন ধরুন আপনার ব্র্যান্ড কেএফসি; তাহলে আপনার ব্র্যান্ডিং টা হবে স্পেশিয়াল বা “অন্যরকম কোন উপাদান এবং মজার কোন রেসিপি নিয়ে”। আর মার্কেটিং হবে এই মজার পন্যটিকে কিভাবে গ্রাহকের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে; যেনো সাধারন মানুষ এই মুরগী ফ্রাই টেস্ট করতে আগ্রহী হয়।
আপনি কোন ধরনের বা কতো বড় ইন্ডাস্ট্রি টার্গেট করছেন সেটা কোন বিষয় না, শুধু গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনারা বিজনেস কে ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করা নিয়ে কাজ করা, এবং তা মার্কেটিং প্ল্যান তৈরীর আগেই। এর মানে কি? এর মানে আপনার কোম্পানিকে আলাদা একটি ব্যাক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরতে পারা।
অন্য ভাবে যদি বলি, ব্র্যান্ড এর লোগো, টাইপোগ্রাফি, কালার গুলো এমন কিছু সিলেক্ট করা যা ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াবে। আপনার ব্র্যান্ড টি যদি বোল্ড হয় তাহলে বাছাই করতে হবে লাইট কোন কালার এবং উদ্দীপনামূলক কোন ট্যাগলাইন। আর আপনি যদি ট্র্যাডিশনাল কোন পণ্য নিয়ে আগান তবে এর কালার পেলেট হতে পারে কিছুটা ধূসর। আর এই ডিজাইন চয়েজ গুলোই হলো মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি।
পরিশেষে
ব্র্র্যান্ড মার্কেটিং যত জোরালো করে আপনি করতে পারবেন আপনার পন্য লঞ্চ করার, অডিয়েন্স গ্রো করার ঝক্কি ততোই কমবে। তাই আপনাকে অবশ্যই ব্র্যান্ড মার্কেটিং এর জন্য ভিন্ন ভিন্ন “ওয়ে অফ থিংকিং” ট্রাই করতে হবে।ব্র্যান্ড