সি আর ও কি?
কনভারসেশান রেট অপটিমাইজেশন বা সি আর ও হলো ডিজিটাল মার্কেটিং ওয়ার্ল্ডে একটি নতুন ক্যারিয়ার। একজন সি আর ও এক্সপার্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য ডিজিটাল এক্টিভিটিস এর মাধ্যমে রেভিনিউ বাড়ানোর কাজ করে থাকেন।
সি আর ও স্পেশালিস্ট এর কাজ
একজন কনভারসেশন রেট অপটিমাইজেশন স্পেশালিস্ট, সি আর ও কনসালটেন্ট হিসেবে ও পরিচিত, যিনি একটি ব্র্যান্ডের প্রধান স্ট্রেটিজিস্ট। একটি প্রজেক্ট এর স্ট্রেটিজি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু সি আর ও স্পেশিয়ালিস্ট পরিকল্পনা ও দেখাশোনা করেন। অর্থাৎ হাইপোথেসিস, টেস্ট রানিং, এনালাইজিং রেজাল্ট, ডকুমেন্টিং ইত্যাদি। একজন সি আর ও স্পেশিয়ালিস্ট এর কাজ গুলো হলো
রিসার্চ
সি আর ও স্পেশিয়ালিস্ট কোয়ালিটেটিভ এবং কোয়ান্টিটিভ রিসার্চ এর মাধ্যমে গ্রাহকের সমস্যা গুলো ধরতে পারেন এবং কনভার্শন ব্লকারস সমাধান করেন।
প্রায়োরাটাইজ
এই রিসার্চ এর ওপর ভিত্তি করে, সি আর ও স্পেশিয়ালিস্ট ওয়েবসাইটের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু গুলোকে গুরুত্বের ভিত্তিতে ধাপে ধাপে সমাধান করেন।
টেস্ট
এই স্তরে কনভার্শন স্পেশিয়ালিস্ট এ/বি টেস্টিং এর মাধ্যমে নিজস্ব হাইপোথেসিস টেস্ট করেন। তিনি এতে বিভিন্ন ভ্যারিয়েশান এর পরীক্ষা করেন, জানার জন্য যে কোন এক্সপেরিমেন্ট টি কোম্পানির জন্য সাফল্য বয়ে আনবে।
রেজাল্ট
এক্সপেরিমেন্ট গুলো কিছু সময় পর্যন্ত রান করা হয় কোম্পনির স্টেটিস্টিকাল সিগনিফিকেন্স দেখার জন্য। একটি এক্সপেরিমেন্ট কেমন পারফর্ম করছে তা দেখার জন্য স্পেশিয়ালিস্ট প্রত্যেকটি ডাটা, কন্ট্রোল এবং ভ্যারিয়েশান এর আলোকে পরীক্ষা করেন।
শেয়ার লার্নিং
এই ধাপে একজন স্পেশিয়ালিস্ট তার পুরো টেস্টিং এর জার্নি থেকে তিনি যা জানলেন তা ইন্টারনাল টিম, ক্লাইন্ট, স্টেকহোল্ডার দের সাথে শেয়ার করেন।
সি আর ও স্পেশালিস্ট এর যোগ্যতা
ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন স্কিল একত্রে জানার মাধ্যমে একজন সি আর ও স্পেশিয়ালিস্ট হওয়া যায়। এসব স্কিল গুলো বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, ব্লগ, ভিডিও, এবং পডকাস্ট এর মাধ্যমেও সহজেই শিখা যায়। সি আর ও রিলেটেড কিছু প্রধান স্কিল গুলো হলো
ভিজুয়াল ডিজাইন
ভিজুয়াল ডিজাইন হলো অনেকগুলো উপাদান এর সমন্বয় যা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স কে আনন্দদায়ক বানাতে সাহায্য করে। ভিজুয়াল ডিজাইন নিয়ে ধারনা থাকলে ব্র্যন্ড ইমেজ এর ইউজিবিলিটি কে উন্নত করা যায়, যা কাস্টমারের ইমোশন এবং চিন্তাধারা কে বুঝতে কাজে লাগে।
হায়ারার্কি বলতে ইমেজ বা টেক্সটকে গুরুত্বের ভিত্তিতে সাজানো হবে তাকে বোঝায়। যখন কাস্টমার সাধারন ভাবে একটি ওয়েবসাইট দেখে, তখন তারা কোন কিছু চিন্তা না করে পুরো পেইজ টি পড়ে বা এক সেকশনে থেকে অন্য সেকশানে যায়, এই অটোনমি টি কোম্পানির ডিজাইনার তৈরী করেন। কিভাবে ভিজুয়াল ডিজাইন টার্মটি কাজ করে তা জানা, ডিজাইনার এবং সি আর ও স্পেশিয়ালিস্ট এর মধ্যে ভুল বোঝাবোঝি কমায়।
ডাটা এনালিটিক্স
মার্কেটিং এ ডাটা ব্যবহার করা হয় কনজিউমার বিহ্যাভিওর ট্র্যাক করার জন্য, যার ওপর ভিত্তি করে কোম্পানি গুলো তাদের পরবর্তী স্ট্রেটিজি সাজায়। একজন সি আর ও স্পেশিয়ালিস্টকে কাস্টমার ডাটা গুলো নিয়মিত চেক করে বের করতে হয় কোন স্ট্রেটিজি টি ভাল করছে এবং কোথায় আরো ভালো করতে হবে।
উদাহরনসরূপ: যখন একটি ওয়েবসাইট এর বাউন্স রেইট অনেক বেশী হয়ে যায় তখন তা এডজাস্ট করার জন্য বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করার মাধ্যমে বাউন্স রেইট ইমপ্রুভ হয় কিনা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।
কপিরাইটিং
কপিরাইটিং এর মাধ্যমে কাস্টমার কে একটি পন্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করানো যায় সেই সাথে এটি পন্য বা সেবা ক্রয়ের ব্যাপারে একশন নিতে সাহায্য করে। একেক সময় একেক স্টাইলের কপিরাইটিং এক্সপেরিমেন্ট করার ফলে কাস্টমারে দের আগ্রহের বিষয় নিয়ে জানা যায়।
এ/বি টেস্টিং
এ/বি টেস্টিং এবং মাল্টিভ্যারিয়েট টেস্টিং সিআরও এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। দুইটি বিপরীতমুখী টেস্টিং এক্সপেরিমেন্ট করে কোনটির পারফর্মেন্স ভালো তা বোঝা যায়। যেমন: সাবস্ক্রিপশান সার্ভিস ফ্রি ট্রায়াল এর সাইন আপ বাড়ানোর জন্য দুইটি টেস্ট কপি দিয়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে, কোন কপি তে সাইন আপ তুলনামুলক বেশী আসছে।
বেসিক কোডিং
একজন সি আর ও হিসেবে ওয়েবসাইট কোড করার তেমন প্রয়োজন নেই, ডেভলপার রা আছেন তা করার জন্য। কিন্তু বেসিক HTML, জাভাস্ক্রিপ্ট, সি এস এস জানা থাকলে ওয়েবসাইটে ছোট চেন্জ করার জন্য বা কোন ঝামেলা হলে তা বোঝার জন্য ডেভলপারের সাহায্য নিতে হয় না, এতে করে অনেক সময় বেচে যায়।
কাস্টমার সাইকোলজি
কনজিউমার সাইকোলজির ক্ষেত্রে কাস্টমার একটি পন্য নিয়ে একশান নিবে কিনা তা বুঝতে পারার এবিলিটি কে বোঝায়। টার্গেট অডিয়েন্সের বিহ্যাভিওর পড়তে পারার ক্ষমতা সব মার্কেটার এর থাকা উচিত।
সি আর ও ক্যারিয়ার গড়তে আরো কিছু যোগ্যতা
একজন সিআরও কে যেহেতু অনেক স্কিল নিয়ে কোম্পানির উচ্চপদে থাকতে হয় তাই কোম্পানি পরিচালনায় তার ভুমিকা থাকে অনেক বেশী। সেজন্য তাকে সারাক্ষন লার্নিং এর মধ্যেই থাকতে হয়। সিআরও হিসেবে আরো কিছু যোগ্যতা যা তাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে সেগুলো হলো
শেখার আগ্রহ
ডিজিটাল মার্কেটিং এরিয়াটিতে প্রতিনিয়ত কোন না কোন আপডেট আসতে থাকে, তাই নিয়মিত পড়াশোনা করে আপডেট থাকা সিআরও এর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। এছাড়াও নতুন ট্যাকনোলজি গুলো নিয়মিত ব্যবহার এবং জানার মাধ্যমে এই ইন্ডাস্ট্রি তে টিকে থাকা সহজ হয়।
এছাড়াও নতুন নতুন ট্রিকস শিখে তা এক্সপেরিমেন্ট করার সময় অধিকাংশ সময়ই তা সঠিক ফলাফল নিয়ে আসতে পারে না, তাই ধৈর্য নিয়ে নতুন বিষয় গুলো ট্রাই করাটা ও সিআরও এর কাজ। সহজ কথায় বলতে গেলে “ফেইলিং” কে এডুকেশন বেইজড সিআরও দের জন্য ফউন্ডেশান বলা যায়।
ডাটা নিয়ে কাজ করার যোগ্যতা
সি আর ও এক্সপার্ট রা সবসময় ডাটা বা তথ্য কে বিভিন্ন স্ট্র্যাটিজি এবং ফলাফল নিয়ে আসার জন্য ব্যবহার করে থাকেন। এই ডাটা গুলোর ওপর ভিত্তি করেই মূলত ব্যবসায়ের বিভিন্ন ট্রিকস পরিবর্তন করা হয়।
টাইম ম্যানেজমেন্ট
সিআরও এক্সপার্ট কে অনেক গুলো মার্কেটিং বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হয় বলে তার টাইম ম্যানেজ করে চলা খুব গুরুত্বপূর্ন। কারন এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য খুব বেশী সময় নিতে গেলে কোম্পানির মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে।
কাস্টমার ইমোশন
কাস্টমার ইমোশন কে বোঝার জন্য একজন সি আর ও এক্সপার্ট কে, নিজেকে কাস্টমারের জায়গায় রেখে ভাবতে হয়। ঠিক কোন কোন বিষয়ের জন্য কাস্টমার পন্য বা সেবা নিচ্ছে এবং কোন বিষয়ের জন্য পন্যের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
কাস্টমার ইমোশন বোঝার জন্য বিভিন্ন ইন্টার্ভিউ, সার্ভে, কাস্টমার ফিডব্যাক গুলো যাচাই বাছাই করা যেতে পারে।
পরিশেষে
সাম্প্রতিককালে অনলাইন ব্যবসায়ের পরিমান বেড়ে যাওয়ার ফলে সিআরও স্পেশিয়ালিস্ট এর কদর দিন দিন বাড়ছে। সিআরও হিসেবে হাই পেয়িং ক্যারিয়ার তো আছেই। তাই আপনি যদি একজন ডিজিটাল মার্কেটার হন তবে আরো কিছু স্কিল বাড়িয়ে সিআরও এক্সপার্ট হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।