মূলত “গ্রোথ হ্যাকার” শব্দটি থেকে “গ্রোথ হ্যাকিং” টার্মটির উৎপত্তি। ২০১০ সালে একজন উদ্যোক্তা “Sean Ellis” গ্রোথ হ্যাকিং এর জনক। তিনি “ড্রপবক্স” এর বিজনেস গ্রোথ এর সময় এই টার্ম টির উদ্ভব করেন।
গ্রোথ হ্যাকিং
গ্রোথ হ্যাকিং একটি আমব্রেলা টার্ম যা সম্পূর্ণ বিজনেস গ্রোথ নিয়ে কাজ করে। সাধারণত নতুন এবং ছোট স্টার্ট-আপ যেগুলোর বাজেট কম সেগুলো নতুন অবস্থায় তাদের গ্রোথ ক্রমবর্ধমানে হারে বাড়ানোর জন্য গ্রোথ হ্যাকিং টেকনিক ব্যবহার করে। গ্রোথ হ্যাকিং এর মূল উদ্দেশ্য হলো একদম কম খরচে অনেক বেশী সম্ভব কাস্টমার টেনে আনা।
গ্রোথ হ্যাকার
গ্রোথ হ্যাকার এবং মার্কেটিং স্পেশিয়ালিস্ট এর কাজের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। তবে একজন গ্রোথ হ্যাকার ক্রিয়েটিভ এবং লো-কস্ট স্ট্রাটিজির ব্যবহার করেন। তাদের গ্রোথ মার্কেটার বলা যায়, কিন্তু তারা সিম্পলি মার্কেটার নন।
যেকোন এমপ্লয়ী যিনি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কিত দায়িত্বে থাকেন, প্রোডাক্ট ম্যানেজার বা ইন্জিনিয়ার, তিনিই গ্রোথ হ্যাকার এর দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তাহলে একজন আদর্শ গ্রোথ হ্যাকার এর কাজ গুলো হলো
নতুন নতুন স্ট্রাটিজি উদ্ভাবন, সেগুলো হাইপোথিসাইজ, প্রায়োরিটাইজ এবং টেস্ট করা। কোন কোন স্ট্রাটিজি কাজ করে তা চেক করা।
কাস্টমার সন্তুষ্টি, সাক্সেস গণনা, গ্রোথ পরিমাপ এর জন্য গ্রোথ প্রায়োরিটি ঠিক করা এবং সঠিক চ্যানেল অনুসন্ধান করা।
গ্রোথ হ্যাকিং মডেল
একটি কোম্পানি কেন এবং কিভাবে গ্রো করবে তা জানাটা গ্রোথ হ্যাকিং এর গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এই মডেল এর মূল পয়েন্ট হলো ট্রাফিক এবং ভিজিটর আনা, ভিজিটর দের ইউজারে রুপান্তর করা, এবং সবশেষে ভিজিটরদের হ্যাপি কাস্টমার বানানো।
অধিকাংশ স্টার্ট-আপ গ্রোথ রেসিপির জন্য “Pirate Funnel” এর “AAARRR” মডেলটি ব্যবহার করে থাকেন। AAARRR এক্রোনিম টির বর্ধিত রুপ হলো Awareness, Acquisition, Activation, Revenue, Retention, এবং Referral। এটি নরমাল কোনো সেলস ফানেল নয়। তাহলে AAARRR এর স্টেপগুলো নিয়ে ডিটেইলে আলোচনা করা যাক
Awareness: গ্রোথ হ্যাকিং এর প্রথম স্টেপেই জানার চেষ্টা করা হয় কিভাবে অডিয়েন্স রা আমাদের ব্রান্ড নিয়ে জানলো। আর এই স্টেপের উদ্দেশ্য হচ্ছে কিভাবে আরো নতুন কাস্টমারদের কোম্পানির সাথে পরিচিত করানো যায়।
নতুন কাস্টমারকে বোঝার জন্য ওয়েলকাম ইমেইলে তাদের কাছে প্রশ্ন করা যেতে পারে, (মাল্টিপল চয়েজ কোশ্চেন; ব্রান্ড এর সাথে তাদের পরিচয় কিভাবে; ইমেইল, সোশাল মিডিয়া নাকি এসইও এর দ্বারা)। এছাড়াও একজন লিড ঠিক কতো সময় কোন স্পেসিফিক ওয়েব পেইজে কাটাচ্ছে তা কাউন্ট করে কাস্টমার পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে জানা যায়।
Acquisition: দ্বিতীয় ধাপের উদ্দেশ্য হলো একজন সাধারন অডিয়েন্স কিভাবে আমাদের লিডে পরিণত হলো তা জানা। এর জন্য বিভিন্ন মার্কেটিং চ্যানেল কেমন পারফর্ম করছে তা যাচাই করা, ব্রান্ডের এড’স এবং এসইও বোঝাটা জরুরী। ওয়েবসাইট ট্রাফিক, ইম্প্রেশন ট্রাক করা এবং এভারেজ কতো সময়ের মধ্যে ক্লিক আসছে তা জানার পাশাপাশি দুইটি প্রশ্নের উত্তর জানা গেলে এই টার্মটি নিয়ে কাজ করা সহজ হয়
কোন চ্যানেল থেকে সবচেয়ে বেশী ইউজার আসছে?
এই লিডদের কোয়ালিটি কেমন?
নতুন কাস্টমার নিয়ে আসার জন্য কন্টেন্ট মার্কেটিং এর ভূমিকা অনন্য। ব্রেইন-স্টোর্মিং এর মাধ্যমে ফ্রেশ কন্টেন্ট ডেলিভার করে ব্রান্ড কে ইউনিক সত্তা হিসেবে পরিচয় করানোটাই এই স্টেপে করা হয়। নতুন আইডিয়া নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হলে ফ্রি কন্টেন্ট বা বিভিন্ন লিড ম্যাগনেট (ফ্রি চেকলিস্ট, ই-বুক, গাইড, পিডিএফ, ভিডিও কোর্স) এর ব্যবহার করা যেতে পারে।
উদাহরণস্বরুপ বলা যায়: হাবস্পট ২০০৯ সালে একটি ফ্রি ওয়েবসাইট গ্রেডার তৈরী করেছিল যা হাজার হাজার ইউজার, ট্রাফিক নিয়ে আসে এবং তাদের ব্রান্ড এওয়ারনেস ভালভাবে পাকাপোক্ত করে দেয়।
Activation: এই স্টেজে যে অডিয়েন্সরা প্রথমবার ওয়েবসাইট ভিজিট করার পর আবার রি-ভিজিটে আসে তাদের সংখ্যা ট্র্যাক করা হয়। অডিয়েন্সরা ই-মেইল লিস্টে সাইন-আপ করে বা এপ ইউজ করে অথবা ব্লগ বিভিন্ন ভাবে আসতে পারে।
এছাড়াও একটি অপট-ইন ফর্মে অযথা কোনো লাইন থাকলে তা বাদ দেয়া যেতে পারে (ফ্রি ট্রায়াল এর ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড অপশনটি বাদ দেয়া, যা অনেক লিড রাই এভোয়েড করে থাকে)। সাবসক্রাইবার দের জন্য এই প্রসেস টি খুব সহজ রাখতে হবে। গুগল একাউন্টের সাহায্যে সাইন আপ করার অপশন দিলে অডিয়েন্স রা ঝামেলাহীন ভাবে সাইন-আপ করতে পারে।
Retention: রিটেনশন স্টেপটিকে খুব জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপ মনে করা হয়। কারন নতুন কাস্টমার তৈরী করার চেয়ে অলরেডী যারা কাস্টমার হয়ে গেছে তাদের কে ধরে রাখতে পারলে পাচঁ গুণ কম খরচ হয়। কাস্টমার রিটেনশন আরো উন্নত করার জন্য বিভিন্ন মেথড ট্রাই করার পর যেটি সবচেয়ে ভাল কাজ করে তা নিয়ে কন্টিনিউ কাজ করতে হয়। যেমন: নিয়মিত নতুন প্রোডাক্ট বা ইভেন্ট এর আপডেট দিয়ে মেইল করা, টাইম লিমিটেড সেল অফার দেয়া ইত্যাদি।
এছাড়াও কমিউনিকেশন চ্যানেল গুলো একত্রে ব্যবহার করে ক্যাম্পেইন সাজানো যায়। ফেসবুক এবং সেলসফোর্স এর রিসার্চ অনুসারে ফেসবুক এডস এবং ইমেইল কে কম্বাইন করার মাধ্যমে ক্যাম্পেইন রান করলে তা অনেক অডিয়েন্সের কাছে পৌছায় এবং রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট বাড়ায়।
Referral: এই স্টেপে ব্রামূলত “গ্রোথ হ্যাকার” শব্দটি থেকে “গ্রোথ হ্যাকিং” টার্মটির উৎপত্তি। ২০১০ সালে একজন উদ্যোক্তা “Sean Ellis” গ্রোথ হ্যাকিং এর জনক। তিনি “ড্রপবক্স” এর বিজনেস গ্রোথ এর সময় এই টার্ম টির উদ্ভব করেন।
গ্রোথ হ্যাকিং এর শুরুটা
গ্রোথ হ্যাকিং এর শুরুটা করা হয় প্রোডাক্ট থেকে। প্রথমেই এমন একটি প্রোডাক্ট তৈরী করা এবং টেস্ট করা যা কাস্টমারদের নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করে আর এর জন্য তারা টাকা খরচ করতে রাজি আছে। এর ফলে এমন সব ডাটা সংগৃহীত হয় যার দ্বারা একজন “আইডিয়াল বায়ার পার্সোনা” সম্পর্কে জানা যায় ও গ্রোথ মার্কেটিং ট্যাকটিক গুলো কে টার্গেট করা যায়।
আপনাকে রাইট ট্রাকে থাকতে হলে অবশ্যই নিয়মিত প্রোডাক্ট আপডেট করতে হবে এবং সেই সাথে কাস্টমার ফিডব্যাক নিতে হবে। একই সময়ে সাক্সেস রেজাল্ট কে ট্রাক করতে হবে। কারণ একটি কার্যকরী গ্রোথ হ্যাকিং প্ল্যান তৈরীর জন্য এ/বি টেস্টিং এবং কনভারশন বা লিড গুলো কে অপটিমাইজ করার টেকনিক জানাটাও প্রয়োজন।
গ্রোথ হ্যাকিং ইন্জিন’স
AAARRR ফানেল এর প্রতিটি স্টেজ ফলো করা খুব কষ্টসাধ্য এবং সত্যি বলতে এক সাথে সব গুলা স্টেপের দিকে ফোকাস করাটাও অসম্ভব। তাই এর পরিবর্তে গ্রোথ হ্যাকিং এর তিনটি মূল ইন্জিন কে বেস ধরেও কাজ করা যায়।
স্টিকি ইন্জিন
দীর্ঘমেয়াদে কাস্টমার ধরে রাখার জন্য স্টিকি ইন্জিনের ব্যবহার করা যায়। সেক্ষেত্রে গ্রোথ হ্যাকিং এর সব স্ট্রাটিজি হয় বর্তমান কাস্টমারদের নিয়ে। কারন এই ধরনের কনজিউমার রা বার বার ফিরে আসে। এর প্রাইমারী ফোকাস নতুন কাস্টমার তৈরীর চেয়ে পুরাতন কাস্টমারদের দিকেই বেশী থাকে।
ভাইরাল ইন্জিন
এই টার্ম টি রেফারেল দের কেন্দ্র করে তৈরী। বর্তমান ক্রেতারা পণ্য বা সেবা নিয়ে কি ভাবছে বা অন্যদের রেফার করছে কিনা তা নিয়েই ভাইরাল ইন্জিনের কাজ। তবে আপনাকে অবশ্যই প্রোডাক্ট এর ভ্যালু এবং কোয়ালিটির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তাই টার্গেট অডিয়েন্স কে জানা, অফার গুলো আরো উন্নত করা, এবং রেফারেল সিস্টেম চালু রাখাটা জরুরী।
পেইড ইন্জিন
পেইড ইন্জিন এর ব্যাপারে সব মার্কেটার রাই জানেন আর এটি হলো পেইড এডভার্টাইজিং। বিজ্ঞাপন দ্বারা আপনি ক্রেতাদের সত্যি সত্যিই কিনে নিতে পারেন। তাই একজন কাস্টমার আনতে যদি আপনার খরচ হয় ১০ টাকা তবে আপনাকে এই ১০ টাকা কভার করতে তো হবেই তার সাথে বাকি ব্যয় গুলোর চেয়ে বেশী রেভিনিউ করতে হবে যেনো কিছু প্রফিট থাকে।
গ্রোথ হ্যাকিং স্ট্র্যাটিজি
গ্রোথ হ্যাকিং স্ট্রাটিজি মূলত তিনটি মেইন এরিয়া নিয়ে কাজ করে। যথা: কন্টেন্ট মার্কেটিং, প্রোডাক্ট মার্কেটিং, এবং এডভার্টাইজিং। ট্যাকটিকস এর ওপর ভিত্তি করে যদি বলি কন্টেন্ট মার্কেটিং একটি লো-কস্ট বা স্বল্প খরচে সম্পন্ন করা যায় এমন ট্যাকটিক। কারণ কন্টেন্ট এর মাধ্যমে সহজেই অডিয়েন্স দের পন্য সম্পর্কে সব তথ্য জানানো যায়।
১ঃ টিপিকাল কন্টেন্ট মার্কেটিং এক্টিভিটি’স গুলো হতে পারে
ব্লগ শুরু করা, মূল্যবান এবং শেয়ারযোগ্য কন্টেন্ট আপলোড করা। সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ও কন্টেস্ট চালানো।
ই-বুক বা হোয়াইট পেপার লিখা।
পডকাস্ট বা ওয়েবিনার।
পণ্য সম্পর্কিত ফোরাম, গ্রুপ এবং সাব-রেডিটে জয়েন করা।
এসইও এর মাধ্যমে কন্টেন্ট ভিজিবিলিটি বাড়ানো।
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বা ব্লগারদের রিভিউ নেয়া।
২ঃ প্রোডাক্ট মার্কেটিং টেকনিক গুলো হতে পারে এমন
ইনভাইট অনলি সাইন-আপ সিস্টেম তৈরী।
ইউজার অনবোর্ডিং প্রসেস কে মজার করে তোলার জন্য গেইম এর ব্যবস্থা করা এবং তার বীপরিতে রিওয়ার্ড প্রদান।
প্রোডাক্ট রেফারকারী এবং নিউ ইউজার দের ডিসকাউন্ট অফার করা।
এফিলিয়েট মার্কেটিং।
গ্রোথ হ্যাকিং এক্সাম্পল
কিছু জনপ্রিয় এবং সাক্সেসফুল গ্রোথ হ্যাকিং ক্যাম্পেইন হলো
Dropbox: ড্রপবক্স পুরাতন ইউজাররা, নতুন কাউকে ইনভাইট করলে এডিশনাল স্টোরেজ সুবিধা দেয়।
Hotmail: হটমেইল তাদের প্রত্যেকটি ইমেইলে তাদের কাস্টমারদের নতুন একাউন্ট খোলার জন্য উৎসাহিত করে।
Ahrefs: জনপ্রিয় এসইও টুলস Ahrefs তাদের কনফারেন্সে গ্রোথ হ্যাকিং একশন নিয়েছিলো যা তাদের ব্রান্ড কে অনেক বেশী কাস্টমার এটেনশন এনে দেয়। অসাধারন কোনো প্রেজেন্টেশন নয়, ব্রিলিয়েন্ট কোন স্পিচ নয়, বরং ১০ সেন্ট এর কফির কাপে তারা “কফি” কিওয়ার্ড টির ডিফিকাল্টি সহ সব ডাটা প্রিন্ট করে দেয়। আর কনফারেন্স এর প্রায় সবার হাতেই কফির কাপটি থাকায় এটি “আইছ-ব্রেকার” এর কাজ করে যা তাদের ব্রান্ড এওয়ারনেস অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
পরিশেষে
গ্রোথ হ্যাকিং টার্ম টা শুনতে যতটা কঠিন, এটি নিয়ে কাজ করা ততোটা কঠিন না। আর গ্রোথ হ্যাকিং এর জন্য কোন “মার্কেটিং গুরু” হায়ার করাটাও প্রয়োজনীয় না। একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করে, এক্টিভলি বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট চালিয়ে মার্কেটিং স্ট্যান্ডার্ড এর ওপরে যাওয়াটাই গ্রোথ হ্যাকার এর মূল উদ্দেশ্য।
কে আপনার কোম্পানিকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারবে তা খুজে বের করা, সঠিক সময়, সঠিক প্লাটফর্ম, এবং বিভিন্ন টুলস এর সাহায্যে কোম্পানির গ্রোথ বাড়ানোটাই গ্রোথ হ্যাকিং। ব্রান্ড