ইনবাউন্ড মার্কেটিং কি? (Inbound Marketing) এবং এটি কিভাবে করবেন?

একজন ক্রেতা একটি পণ্য ক্রয়ের জার্নিতে বিভিন্ন স্তর পার করেন, ঠিক এরকম একটি স্তরে যখন চমৎকার একটি কন্টেন্ট ক্রেতার সামনে তুলে ধরা হয়, একেই মার্কেটিং এর ভাষায় ইনবাউন্ড মার্কেটিং বলে। 

আউটবাউন্ড মার্কেটিং গ্রাহকের পন্য ক্রয়ের সদিচ্ছা তৈরির ওপর নির্ভরশীল , তবে ইনবাউন্ড মার্কেটিং হলো কাস্টমার এর সব প্রশ্নের উত্তর দেয়া এবং এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধি করা। তাই এ দুই মার্কেটিং স্ট্রেটিজি যখন একসাথে করা হয় তখন কাস্টমার কয়েকগুণ পর্য়ন্ত বৃদ্ধি পায়।

সাধারণত ৮১% কাস্টমার পণ্য ক্রয়ের আগে অনলাইনে সার্চ করে পন্য সম্পর্কে জানতে, তাই কাস্টমার কে পন্যের বিষয়ে জানাতে কাস্টমার কেন্দ্রীক কন্টেন্ট তৈরী প্রয়োজন।

ইনবাউন্ড মার্কেটিং মেথডোলজি

ইনবাউন্ড মেথডোলজি তিনটি মেইন পিলার এর ওপর তৈরি,

  • এট্রাক্ট বা ক্রেতা আকৃষ্টতা
  • এংগেজমেন্ট বা সংযুক্ততা
  • ডিলাইট বা ক্রেতা সন্তুষ্টি

এই তিনটি পয়েন্ট যখন একসাথে কাজ করে তখন কাস্টমারকে খুশি করা অনেকটাই সহজ হয়। একজন কাস্টমার এর চাহিদা একটি পন্য যদি পূরন করতে পারে তখন এই কাস্টমারের রেফারেন্স এর মাধ্যেমে আরো কাস্টমার বাড়ে। আর সেই সাথে এই চক্র টি ঘুরতে থাকে। এটাই মুলত ফ্লাই হুইল এর স্তম্ভ। একটি প্রতিষ্ঠান কাস্টমারের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যেভাবে গ্রো করতে থাকে ফ্লাইহুইল একেই চক্রাকারে তুলে ধরে।

কাস্টমারের ইতিবাচক ফিডব্যাক এই ফ্লাইহুইল কে সচল রাখে, তবে কোন ধরনের বৈসাদৃশ্য কোম্পানির ফ্লাই হুইলের গতি কমিয়ে দিতে পারে। নিচে ইনবাউন্ড মার্কেটিং  এর স্তর গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:-

এট্রাক্ট বা ক্রেতা আকৃষ্টতা

ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর প্রথম স্তর টিই হলো ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা। যেহেতু মার্কেটিং ট্রিকস গুলো প্রতি বছর নতুন মোড় নেয়, তাই প্রতিষ্ঠান গুলো সহজেই কাস্টমার দের গুরুত্বপূর্ণ ডাটা গুলো সংরক্ষন করে রাখতে পারে। এই ডাটা গুলো এনালাইসিস করে, কাজে লাগিয়ে কোম্পানি সহজেই টার্গেট অডিয়েন্স এর কাছে পৌছাতে পারে। এই তথ্য গুলো একটি কোম্পানিকে এর কম্পিটিটর দের থেকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যায়। যেহেতু কম্পিটিটর সব প্রতিষ্ঠান মোটামোটি এক লেভেলেই চলে, তাই যে কোম্পানি তে কাস্টমার সম্পকিত তথ্য সবচেয়ে বেশি সেই কোম্পানি একটু এগিয়ে থাকে। 

তো একটি কোম্পানি কি করে কাস্টমার দের আকৃষ্ট করেতে পারে, এ ধরনের কিছু ট্রিকস হলো।

এস ই ও

কন্টেন্ট কে উপকারি তথ্য এবং কাস্টমার দের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাজানো কেই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এস.ই.ও বলে। আর কিওয়ার্ড রিসার্চ খুব জনপ্রিয়, অনেক ব্যবহৃত একটি টার্ম, টার্গেট অডিয়েন্সকে শনাক্ত করার জন্য। এছাড়াও রিসার্চ করা কিওয়ার্ড গুলো ব্লগ এবং সোশাল মিডিয়ার হ্যাসট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

গুগল তখনি একটি কোম্পানি কে সার্চ রেজাল্ট এর ওপরের দিকে নিয়ে আসে যখন কন্টেন্ট টিতে কাস্টমারের অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর থাকে।

ব্লগিং

একটি নিশ এর ব্র‌্যান্ড অথোরিটি বাড়ানোর জন্য ব্লগিং অন্যতম মাধ্যম। একটি কম্পিটিটিভ জায়গা তৈরীর জন্য, তথ্যবহ ও শিক্ষনীয় কন্টেন্ট এর ভুমিকা অপরিসীম। এ ধরনের কন্টেন্ট গুলো কাস্টমারের জিজ্ঞাসার সমাধান সহজেই দিতে পারে। 

ব্লগিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত তথ্য গুলো, অভিজ্ঞ ব্যাক্তি দের গবেষনা লিখে সহজেই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যায়। ব্লগিং কে আবার ভিডিও  আকারে প্রকাশ করে ভিডিও মার্কেটিং এর কাজ করা যায়। ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর মুল হোতা বলতে ব্লগিং কেই বোঝায়।

ভিডিও মার্কেটিং

ব্র‌্যান্ড এওয়ারনেস বারানোর জন্য সবচেয়ে উপযোগি মাধ্যম হলো ভিডিও মার্কেটিং। ভিডিও কন্টেন্ট প্রকাশের জন্য বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম গুলো হলো ইউটিউব, টিকটক। তবে ইদানিং ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম তাদের এলগোরিদমে ভিডিও কন্টেন্ট কে প্রাধান্য দিচ্ছে। 

সোশাল মিডিয়া

একটি কোম্পানি সহজেই অথরিটি পাবার জন্য সোশাল মিডিয়ায় তথ্যবহুল কন্টেন্ট দিয়ে তাদের ভ্যালু বাড়াতে পারে। শুধু সেলস বেজড কন্টেন্ট দেয়া অকেজো ট্রিকস হয়ে পড়েছে। যেহেতু ৪.৪৮ বিলিয়ন মানুষ সোশাল মিডিয়ায় উপস্থিত, তো বিক্রেতা সহজেই টার্গেট অডিনয়েন্স এর নিকট সহজেই পৌছাতে পারেন। 

যথরীতি একটি বিজনেস কোন মার্কেটিং প্লাটফর্ম কে বেছে নিবে তা নির্ভর করবে সেই ব্যবসায়ের টার্গেট অডিয়েন্স এর ওপর। 

এংগেজমেন্ট বা সংযুক্ততা

যেহেতু প্রথম পর্যায়ে আমরা কাস্টমার কে আকৃষ্ট করে ফেলেছি তাই এখন আমাদের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু, টার্গেট কাস্টমার দের পন্যের দিকে ধাবিত করা। 

এই ধাপে টার্গেট অডিয়েন্স রা কনভার্ট হয়ে ক্রেতা হয়ে যেতে পারে আবার নাও হতে পারে। এই ধাপকে অনেকেই ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর অংশ মনে না করলে আমরা একে এই মার্কেটিং এর আওতাধীন মনে করেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। এই স্তরের কি-পয়েন্ট হলো কাস্টমারকে ক্রয়ের ধাপে আরেকটু এগিয়ে নেয়া।

কল টু একশন

সিটিএ বা কল টু একশন এমন একটি বাটন যেখানে ক্লিক করে কাস্টমার আরো একটি ধাপ আগায়। বাই নাও, সাইন আপ এগুলো হলো খুব কমন কিছু সিটিএ এর উদাহরণ। সিটিএ তে অনেক বেশী রেসপন্স পাবার জন্য এই বাটন গুলোকে এমন বানাতে হবে যেনো খুব সহজে কাস্টমারের নজর কাড়ে, যেমন বাটন টাকে রঙিন করা।

ল্যান্ডিং পেইজ

একটি ওয়েবসাইটের লিংকে প্রবেশ করার পরই, লিংকটি যে পেইজে কাস্টমারকে নিয়ে যায় তাই এর ল্যান্ডিং পেইজ। প্রথম ইমপ্রেশন এর ওপর অনেকটাই নির্ভর করে, এরপর কাস্টমারটি কোনো স্টেপ নিবে কিনা। তাই ল্যান্ডিং পেইজের সবটা জুড়ে প্রডোক্ট এর বর্ননা, কেন এটি কাস্টমারের তা প্রয়োজন, এগুলো সাধারন ভাষায় ফুটিয়ে তুলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পেজটি যেন অনেক বেশী সেলসি না হয়, বেশী সেলসি হলে তা কাস্টমারের বিরক্তির কারন হতে পারে।

পপ আপ ফর্ম

ল্যান্ডিং পেইজের মতোই, পপ আপ ফর্ম কাস্টমারদের তথ্য সংরক্ষন ও লিড জেনারেশন এর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মেথড। বিক্রেতা ক্রেতা-সন্তুষ্টির জন্য কি অফার করবেন তার ওপর পপ আপ ফর্ম এর ধরন নির্ভর করে। ল্যান্ডিং পেইজ এবং পপ আপ ফর্ম এর মুল পার্থক্য টা হলো, পপ আপ ফর্ম একটি নিদিষ্ট সময়ে পেইজে চলে আসে। যেমন- কাস্টমার একটি নির্দিষ্ট সময় ওয়েবসাইটের পেইজে থাকলে পপ আপ ফর্ম আসতে পারে অথবা ভিজিটর স্ক্রলিং এর সময় নির্দিষ্ট পয়েন্ট টি ছাড়িয়ে নিচে গেলেও পপ আপ ফর্ম আসতে পারে।

ই মেইল মার্কেটিং

ইনবাউন্ড মার্কেটিং’র ইমেইল মার্কেটিং একটু ভিন্ন। এটি মূলত কাস্টমার ( ইতোমধ্যে যারা সাইন আপ করেছে) দের পন্য সম্পর্কে অবগত করা, ইমেইলের মাধ্যমে করা হয়। এটি মোটেই কোল্ড ইমেইলের মতো হবে না। পন্য ছাড়াও নিউজলেটার বা কোন ইভেন্ট সম্বন্ধে কাস্টমার দের অবগত করা যেতে পারে। এমনকি ফাইনাল স্টেইজ ডিলাইট এ ও ই মেইল মার্কটিং নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

ডিলাইট বা ক্রেতা সন্তুষ্টি

এবার আমরা জানব ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর সর্বশেষ ধাপ ক্রেতা সন্তুষ্টি বা ডিলাইট নিয়ে। পন্য বা সেবার ব্যবহারের পর অসাধারন একটি অভিজ্ঞতা যখন ক্রেতাকে সন্তুষ্ট করে তা খুব স্বভাবিক ভাবেই রেভিনিউ বাড়াতে সক্ষম হয়। সন্তষ্ট কাস্টমার রা ২০% পর্য়ন্ত নতুন ক্রেতা নিয়ে আসে। 

ক্রেতা সন্তুষ্টির জন্য ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর কিছু স্ট্র‌্যাটিজি হলো

সার্ভে

একটি ব্যবসায়ের জন্য কোন বিষয়টি ভালো কাজ করছে এবং কোনটি কাজ করছে না তা জানার জন্য সার্ভে খুব গুরুত্বপূর্ন। সার্ভে গুলোতে রিয়েল কাস্টমার রা অংশ নেয় বলে এর ফলাফল খুব একোরেট হয়। জটিল কিছুই না বরং কাস্টমাার দের রিয়েল ফিডব্যাক পাওয়া টাই এখানে মুখ্য। কোন গিফ্ট বা ছোট কম্পিটিশন এর দ্বারা সার্ভে কে অনেক আকর্ষনিয় করে তোলা যায়।

সোশাল মিডিয়া লিসেনিং

এ পদ্ধতি তে একটি ইন্ড্রাস্টির বর্তমান ট্রেন্ড সম্পর্কে বোঝা যায়। অডিয়েন্স এর জন্য কি গুরুত্বপূর্ণ, একজন কাস্টমার পন্যটি কে কিভাবে নিচ্ছে, কি ধরনের চ্যালেন্জ সামনের দিনগুলোতে  আসতে পারে, বা পন্য বা সেবাটিকে কি করে আরো উন্নত করা যায়, এগুলো খুব সহজে সোশাল মিডিয়া লিসেনিং এর মাধ্যমে জানা যায়।

পরিশেষে

ইনবাউন্ড মার্কেটিং এর হার্ট হলো কাস্টমারকে ভ্যালু প্রদান করা। এটি মূলত কাস্টমারকে নিজের ব্র‌্যান্ডের দিকে টেনে আনা। কাস্টমারকে পন্য ক্রয়ের প্রতিটি ধাপে উপকারী কন্টেন্ট দিয়ে পৌছানো। তাই অনলাইন বেজড মার্কেটিং এর জন্য ইনবাউন্ড মার্কেটিং খুব দরকারী।

Share:

More Posts

Best Uses of LinkedIn Search – Part 1

বিক্রয়কর্মী হিসাবে, আপনার কাজ সম্ভাব্য কাস্টোমার খুঁজে বের করা এবং সেগুলোকে লিড হিসেবে নির্বাচন করা। এক বিলিয়ন সদস্যসহ, লিংকডইন আপনার মাছ ধরার জন্য মাছে ভরা

LinkedIn Marketing

‘বাস্তবে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী আছেন যারা কোল্ড কল ঘৃণা করে এবং তাদের উত্তর দিবেন না। লিঙ্কডইন হল তাদের কাছে পৌঁছানোর চাবিকাঠি।’   সম্প্রতি একটি বৈশ্বিক

কিভাবে লিঙ্কডিন (Linkedin) ব্যাকগ্রাউন্ড/ব্যানার ইমেজ তৈরি করবেন?

সুপারিশকৃত ছবির আকার – ১৫৮৪ x ৩৯৬ আপনার প্রোফাইল ছবির পিছনে আপনার লিঙ্কডইন ব্যাকগ্রাউন্ড / ব্যানার রয়েছে, যা লিঙ্কডইন প্রোফাইলগুলির সর্বাধিক ব্যবহৃত অংশগুলির মধ্যে একটি। 

লিঙ্কডিন (Linkedin) প্রোফাইল ফটো টিপস সম্পর্কে জানতে চান!

আপনার পিছনে একটি সমতল পটভূমি রয়েছে। এটি আপনাকে বিস্তৃত করবে, যেখানে একটি বিশৃঙ্খল পটভূমি আপনার থেকে ভিউয়ারকে বিভ্রান্ত করবে। যদি সম্ভব হয় তবে লিঙ্কডিন ব্যাকগ্রাউন্ডের

Send Us A Message