ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কি? (Influencer Marketing) টার্গেট অডিয়েন্স কে ইনফ্লুয়েন্স করার ৬ টি টিপস

ইনফ্লুয়েন্সার হলো তারাই যারা কোন স্পেসিফিক গ্রুপের মানুষদের ক্রয় সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সেটা কিভাবে? ইনফ্লুয়েন্সার এর নিজস্ব অথোরিটি, নলেজ, পজিশন এবং অডিয়েন্সের সাথে তার সম্পর্কের মাধ্যমে। এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, ইন্ফ্লুয়েন্সার দের ফলোয়াররা কোনো ব্র‌্যান্ডের ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখায় না, বরং তারা তাদের পছন্দের ইনফ্লুয়েন্সার দের মতামত (কোন পন্য বা সেবার ব্যাপারে) কেই প্রাধান্য দেয়। 


ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কি

সিম্পলি বলতে গেলে, কোন ব্র্যান্ড যখন পন্য বা সেবার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য কোন ইনফ্লুয়েন্সার এর সাথে কাজ করে তাই ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং। একে এক ধরনের সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং ও বলা যায়, কারন ইনফ্লুয়েন্সার এর কাজ মূলত সোশাল মিডিয়া ভিত্তিক। তার অবশ্যই ভালো পরিমাণ “ফলোয়ার” থাকতে হবে এবং নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে এক্সপার্ট হতে হবে। 

যদি কোন কাস্টমার ইনফ্লুয়েন্সার এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পন্য বা সেবা ক্রয় করে তবে তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন লাভ করে থাকেন যদিও কমিশন ছাড়া অন্য কোন ভাবেও তিনি পেমেন্ট নিতে পারেন। তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে।

 

সেরা কৌশল সমূহ

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এ অন্য সব মার্কেটিং এর চেয়ে ভিন্ন কোন ব্যাপার নেই। তবে হ্যা, প্ল্যানমাফিক করা হলে এটি খুব ভালো আউটপুট দিয়ে থাকে। পাবলিক ফিগারের ওপর একগাদা টাকা ফেলা এবং ভাল রেজাল্ট আশা করাই যায়; কিন্তু এর আগে ইনফ্লূয়েন্সার মার্কেটিং এর শুরু থেকে শেষ জেনে নেয়াটাও কিন্তু অত্যাবশ্যকীয়।

 

উদ্দেশ্য ও প্ল্যান ঠিক করা

সব ধরনের মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি এই একটি প্রশ্ন দিয়েই শুরু হয়, “কোন মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজির দ্বারা কোম্পানি কি অর্জন করতে চায়”। একটি ক্লিয়ার এবং সঠিক গোল সেট করাটা ফাউন্ডেশন গড়ে নেয়ার মতোই। যেমন ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর প্রথম বা প্রধান গোল হলো ব্র্যান্ড এওয়ারনেস বৃদ্ধি করা, সেই হিসেব মতে সেলস বৃদ্ধি হতে পারে তৃতীয় লক্ষ্য।

আরেকটু গভীরে যদি যাই, শুধু ব্র্যান্ড এওয়ারনেস বাড়ানোটাই যথেষ্ঠ না। প্রত্যেকটি কোম্পানিই চায় আরো বেশী কাস্টমার; আরো বেশী ফলোয়ার, আরো বেশী বিক্রয়। স্পেসিফিক্যালি বলতে গেলে “ব্র‌্যান্ড এওয়ারনেস বাড়াতে চাই” এটা বলার বদলে বলা যেতে পারে “ আমরা এক মাসের মধ্যে ৪০% পেজ ইম্প্রেশন বাড়াতে চাই”। তো স্পেসিফিক একটি আইডিয়া দিয়ে দিলে ইনফ্লুয়েন্সার টার্গেট অনুযায়ী কাজ করতে পারেন।  

ইনফ্লুয়েন্সার ঠিক করে নেয়ার সময় তার টোটাল কস্ট আলোচনা করে নেয়া যেমন জরুরী তেমনি জরুরী প্রজেক্টটির গোল নিয়ে তাকে জানানো। ক্যাম্পেইন এর শুরু থেকে শেষ সম্পূর্ণ প্ল্যানটি শেয়ার করে নেয়ার মাধ্যমে প্রজেক্ট গোল ঠিক করে নেয়া সহজ হয়। পন্য সম্পর্কিত পোস্ট বা হাউ-টু ভিডিও কোনটির দ্বারা গ্রাহক বেশী আকৃষ্ট হবে, কোন তথ্য গ্রাহকের কাছে পৌছাতে হবে তা ঠিক করে নেয়াও গুরুত্বপূর্ণ। 

 

আইডিয়াল কাস্টমারদের জানা

এই স্টেপে মূলত জানতে হবে কোন ধরনের মানুষদের প্রভাবিত করতে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর সাহায্য নেয়া হচ্ছে। একটি সফল ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ক্যাম্পেইন সাজানোর জন্য প্রথমেই টার্গেটেড কাস্টমারকে বুঝতে হবে। কাস্টমারদের সমস্যা ও এর সমাধান নিয়ে আগাতে হবে। 

একটি বায়ার পার্সোনা বা ইউজার পার্সোনা তৈরীর মাধ্যেমে সহজেই তা করা যায়। বায়ার পার্সোনা হলেন অনুমান নির্ভর একজন ফিকশনাল ক্যারেকটার, যে সব কাস্টমার দের রিপ্রেজেন্ট করে, কাস্টমারদের অসুবিধা গুলো পার্সোনাল টাচ দিয়ে ডিটেইল বর্ণনা দেয়। কাস্টমারদের সব প্রশ্নের উত্তর ইন-ডেপথ প্রদান করে বলে কাস্টমারদের এঙ্গেজ হবার সম্ভাবনা থাকে প্রবল। 

বায়ার পার্সোনার কমন উদাহরনে যা যা তথ্য অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে তা হলো; বয়স, স্থান, পেশা, হবি, সমস্যা বা চ্যালেন্জ সমূহ এবং সমাধান। আমাদের বায়ার পার্সোনা হিসেবে ধরে নেয়া যাক মি. মৃদুল কে, তিনি প্রতি বছর শীতে ট্যুরে যেতে খুব পছন্দ করেন। কিন্ত বেশ কয়েক বছর ধরে তার বাচ্চারা যত বড় হচ্ছে তার লাগেজের পরিধিও দিন ‍দিন বাড়ছে। সেই হিসেবে তার দরকার একটি প্রাইভেট গাড়ি, যা এখন তিনি নিতে পারবেন না। তাই তিনি স্টোরেজ সমস্যার সমধান খুজছেন। 

তারপর কোন রুফ বক্স কোম্পানির বিজ্ঞাপন তার চোখে পড়লো, তিনি এড এর ভিতরে ঢুকে দেখলেন তার প্রিয় ব্লগার এই ব্যাগটি রেকোমেন্ড করছেন। সেই হিসেবে তিনি পেয়ে গেলেন বিশ্বস্ত একটি সোর্স। তারপর! তারপর আর কি, সে ব্যাগটি কিনে ফেললো। আর রুফ ব্ক্স কোম্পনির টার্গেট অডিয়েন্স রা বায়ার পার্সোনার সমস্যা গুলো নিজেদের বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে সহজ সমাধান পেয়ে গেলো। 

 

বেস্ট প্লাটফর্ম রিসার্চ

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর জন্য ইন্সটাগ্রাম সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম। কিন্ত এর মানে এই নয় যে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স দের শুধু মাত্র ইন্সটাগ্রামেই খুজে পাওয়া যাবে। টার্গেট অডিয়েন্স এর ওপর নির্ভর করে মার্কেটিং চ্যানেল গুলো হতে পারে; ফেসবুক, পিন্টারেস্ট, টিকটক, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট, বা ইউটিউব। 

ক্যাম্পেইন কোন চ্যানেলে রান করলে ভাল আউটপুট পাওয়া যাবে তা জানার জন্য আগে জানতে হবে কোম্পানির টার্গেট অডিয়েন্স কোন চ্যানেলে সবচেয়ে বেশী সময় কাটায়, এবং প্রোডাক্ট কন্টেন্ট টি কোন চ্যানেলে স্যুট করবে। হতে পারে সেটি কন্টেন্ট, ব্লগ পোস্ট, ফটো বা কুইক ফায়ার ক্যাপশন। 

 

ক্যাম্পেইন বাজেট সেট 

এভারেজ রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট অনুসাযায়ী ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং পাঁচ গুণ পর্যন্ত রিটার্ন নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু ভুল কিছুতে ইনভেস্টমেন্ট যেন না হয় তার জন্য উচিৎ ক্লিয়ার একটি বাজেট তৈরী করে নেয়া। তাহলে বাজেট তৈরীর আগে কি কি বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে?

  • ক্যাম্পেইন টি ঠিক কতো দিন চলবে।
  • কোন ধরনের কন্টেন্ট তৈরী করতে হবে ও কন্টেন্ট টি কে তৈরী করবে।
  • কন্টেন্ট তৈরীর পেছনে খরচ কতো হবে।

ইনফ্লুয়েন্সার বাছাই 

অনেক বেশী ফলোয়ার দেখেই ক্যাম্পেইন এর ইনফ্লুয়েন্সার ঠিক করে ফেলা ব্যাপারটি ঠিক নয়। কিছু ফ্যাক্টর বিবেচনা করার পরই ইনফ্লুয়েন্সার ঠিক করা শ্রেয়। যেমন

  • অডিয়েন্স টাইপ: প্রথমেই লক্ষ্য রাখতে হবে ইনফ্লুয়েন্সার এর অডিয়েন্স কোম্পানির প্রোডাক্টের জন্য ভালভাবে ফিট করছে কিনা, তারা নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবার ব্যাপারে আগ্রহী হবে কিনা। 
  • অথোরিটি: ইনফ্লুয়েন্সার বাছাই করার সময় অডিয়েন্সের কাছে তার অথোরিটি বা গ্রহনযোগ্যতা কেমন সেই বিষয়ে জেনে নিতে হবে। এমন সব ইনফ্লুয়েন্সার দের সাথে কাজ করা উচিত যারা নিজেদের ফলোয়ারদের মধ্যে এক্সপার্ট হিসেবে গণ্য।
  • কন্টেন্ট: ইনফ্লুয়েন্সার এর কন্টেন্ট গুলো ভাল কিনা তা চেক করে নিতে হবে, সে কেমন করে প্রেজেন্ট করছে, সে ক্লিয়ার মেসেজ দিতে পারছে কিনা, তার অডিয়েন্সরা পজিটিভ রেসপন্স দিচ্ছে কিনা এসব বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে। 

ক্যাম্পেইন ট্রেকিং ও আউটকাম যাচাই

ক্যাম্পেইন এর রেজাল্ট যাচাই করার জন্য কিছু মেট্রিক্স এর সাহায্য নেয়াে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই অরিজিনাল উদ্দেশ্য অর্জিত হলো কিনা তা দেখেই ক্যাম্পেইন সফল কি বিফল তা বোঝা যায় তারপরেও কিছু কেপিআই হতে পারে এমন

  • ভ্যানিটি মেট্রিক্স: লাইক, ক্লিক, মেনশন, শেয়ার, কমেন্ট ইত্যাদি ডাটা থেকে ভ্যানিটি মেট্রিক্স যাচাই করা যায়। 
  • এঙ্গেজমেন্ট: কন্টেন্ট এর ওপর শতকরা কতো ভাগ অডিয়েন্স এঙ্গেজ হয়েছে এবং কতো জন মানুষ ক্যাম্পেইন এর দ্বরা প্রভাবিত হয়ে পন্য বা সেবা কিনেছে। 

এই ডাটা গুলোর ক্লিয়ার পিকচার যখন থাকবে তখন নির্ণয় করা খুব সহজ হবে ক্যাম্পেইন টি ওয়ার্ক করেছে কিনা বা কতো পার্সেন্ট রিভিনিউ বাড়াতে সাহায্য করেছে। 

 

পরিশেষে

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর দিকে তাকালেই বোঝা যায় ওয়ার্ড অফ মাউথ একজন ক্রেতার ক্রয় সিদ্ধান্তে কি পরিমাণ ভুমিকা রাখতে পারে। তবে বর্তমান সময়ে ব্র্র্যান্ড গুলো পন্য বা সেবা প্রোমোট করার জন্যই নয় বরং কাস্টমার সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করছে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ক্যাম্পেইন, তার কারন লং টার্ম রিভিনিউ আনাটাই কোম্পানির কাছে মুখ্য। 

Share:

More Posts

Best Uses of LinkedIn Search – Part 1

বিক্রয়কর্মী হিসাবে, আপনার কাজ সম্ভাব্য কাস্টোমার খুঁজে বের করা এবং সেগুলোকে লিড হিসেবে নির্বাচন করা। এক বিলিয়ন সদস্যসহ, লিংকডইন আপনার মাছ ধরার জন্য মাছে ভরা

LinkedIn Marketing

‘বাস্তবে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী আছেন যারা কোল্ড কল ঘৃণা করে এবং তাদের উত্তর দিবেন না। লিঙ্কডইন হল তাদের কাছে পৌঁছানোর চাবিকাঠি।’   সম্প্রতি একটি বৈশ্বিক

কিভাবে লিঙ্কডিন (Linkedin) ব্যাকগ্রাউন্ড/ব্যানার ইমেজ তৈরি করবেন?

সুপারিশকৃত ছবির আকার – ১৫৮৪ x ৩৯৬ আপনার প্রোফাইল ছবির পিছনে আপনার লিঙ্কডইন ব্যাকগ্রাউন্ড / ব্যানার রয়েছে, যা লিঙ্কডইন প্রোফাইলগুলির সর্বাধিক ব্যবহৃত অংশগুলির মধ্যে একটি। 

লিঙ্কডিন (Linkedin) প্রোফাইল ফটো টিপস সম্পর্কে জানতে চান!

আপনার পিছনে একটি সমতল পটভূমি রয়েছে। এটি আপনাকে বিস্তৃত করবে, যেখানে একটি বিশৃঙ্খল পটভূমি আপনার থেকে ভিউয়ারকে বিভ্রান্ত করবে। যদি সম্ভব হয় তবে লিঙ্কডিন ব্যাকগ্রাউন্ডের

Send Us A Message