বর্তমানে এন্টার্টেইনমেন্ট বলতে আমরা বুঝি সোশ্যাল মিডিয়া। অল্প বা বেশী, যতটুকু সময়ই আমরা বিরতির জন্য পাই না কেন, সেই সময়টাকে উপভোগ্য করার জন্য ঢু দেই সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলোতে। আর সোশ্যাল মিডিয়াতে আজকাল “মিমস” এ জয় জয়কার।
মার্কেটাররা এত জনপ্রিয়, হাস্যরসাত্মক বিষয়টিকে ব্যবহার করছেন মার্কেটিং এর একটি ট্রিকস হিসেবে। যথেষ্ঠ হিউমার ব্যবহার করে একটি প্রতিষ্ঠান সহজেই ভাইরাল হতে পারে। এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধির জন্যে মিম মার্কেটিং খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে । এমনকি এটি এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলোতে ঢুকলেই কোন না কোন মিম চোখে পড়বেই।
মিম মার্কেটিং কি?
অল্প কথায় বলতে গেলে মিম মর্কেটিং হলো কৌতুক দিয়ে মার্কেটিং। যা আর্টিকেল এর শেয়ার রেট অনেক বাড়িয়ে দিতে পারে। মিম শেয়ার এর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে এর কাস্টমারের কাছে এর গ্রহনযোগ্যতা বোঝা যায়। মিমস খুব দ্রুত ভাইরাল হয় বলে মার্কেটার রা তা কন্টেন্ট বুস্ট করার জন্য কাজে লাগান।
মিম এর কনসেপ্ট টি কিন্তু মোটেই নতুন কোন বিষয় নয়। ১৯৭৬ সালে, ইথোলজিস্ট রিচার্ড ডকিন্স তার বই “দ্য সেলফিস জিনি” তে মিম শব্দটির ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। কোন শব্দ (একটু ভিন্ন ভাবে) উপস্থাপনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক উন্নতি এবং ফ্যাশন, গান ইত্যাদির আইডিয়াকে তরান্বিত করা। ২১ শতকে ও ঠিক এই ব্যাপারটিই ঘটছে, মিমস এখন একটি আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
যদিও সব ধরনের মিমই যে ভাইরাল হবে এমনটা ভাবা ভুল। এর জনপ্রিয়তা ফান এবং রিলেটেবল কিনা তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। ট্রেন্ডি টপিক কে কেন্দ্র করে অন্তর্নিহিত জোকস গুলোই অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাইরাল হয়।
মিম মার্কেটিং এর সুবিধা বা উদ্দেশ্য
যখন বৃষ্টি হয় বা অনেক বেশী শীত পড়ে, অথবা পুরো বিশ্বে কোন বড় কিছু ঘটে, হোক সেটা পলিটিক্স, আর্ট, বিশ্বকাপ; তা মিমস এ রূপ নিতে বেশ সময় নেয় না। তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক কিভাবে মিম কে মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
নিজস্ব কন্টেন্ট অনুসারে তৈরীকৃত মিম গুলো খুব উপকরী হয়। এর প্রধান কারন গুলো হলো
এঙ্গেজমেন্ট বৃদ্ধি
যেহেতু অধিকাংশ মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় আসে রিল্যাক্স করার জন্য তাই ফানি এনিম্যালস বা বাচ্চাদের মিম গুলো লাইক বা শেয়ার এর গ্যারান্টি থাকে। হিউমার ব্যবহার করে করা মিম গুলো নতুন কাস্টমারের মনোযোগ আকর্ষন করতে পারে সহজেই। বিশেষত ইতিবাচক এবং কুল মিমস নতুন পুরাতন সব গ্রাহক দের মনেই প্রভাব বিস্তার করে।
ফ্রি মার্কেটিং
টাকা খরচ না করে ভাইরাল হবার একমাত্র ট্রিকস হলো মিমস। বরং প্রতিষ্ঠানের জন্য মিম মার্কেটিং বোনাস হিসেবে ধরা যায়। মিমস কিন্তু ইনফোগ্রাফিক এর মতো ডিটেইলড কোন ডিজাইন না। মিম তৈরীর উপাদান গুলো আগে থেকেই নেট দুনিয়ায় সয়লাভ থাকে বলে মার্কেটার এর কাজ অনেকটাই কমে যায়।
এমনকি মিম তৈরীর জন্য গ্রাফিক ডিজাইনারের প্রয়োজন ও হয় না। সহজলভ্য এবং ফ্রি অনেক মিম জেনারটের সাহায্য নিয়ে, নিজের কন্টেন্ট বা প্রোডাক্ট এর সাথে রিলেটেড মিম তৈরী করা যায়। অল্প সময় খরচ করে অনেক গ্রাহককে আকৃষ্ট করা যায়।
ক্রেতা বিক্রেতা সম্পর্ক বৃদ্ধি
ইদানিং অনেক কোম্পানি তাদের ক্রেতাদের সাথে খুব সহজ বা বন্ধুত্বসুলভ একটি সম্পর্ক তৈরী করতে আগ্রহী থাকে। অডিয়েন্স নিজের সাথে রিলেট করতে পারে এ সমস্ত মিমস গুলো তাদের মধ্যে ভাবাবেগ তৈরী করে। এছাড়াও মিমস গুলো যখন অডিয়েন্স এর মন-মানসিকতার সাথে মিলে যায় তখন তা ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ককে খুব সহজ করে দেয়। ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি বাড়ানোর জন্যও মিম গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে।
মার্কেটিং মিম বানানোর উপায়
খুব কম সময়ে এমনকি এক সেকেন্ড এর মধ্যেই মিম তৈরী করা যায়। তবে যেকোন একটি মিম হলেই হলো ব্যাপারটা এমন নয়, মিমটি এমন হতে হবে যেন তা ইম্প্রেশন পায় আর বিজনেসের জন্য সুদুরপ্রসারী লাভ নিয়ে আসে। মার্কেটিং মিম গুলো তৈরীর আগে কিছু বিষয় নিয়ে অবগত থাকতে হবে। সেগুলো হলো
টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কে জানা
অন্য যেকোন মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজির মতোই মিম মার্কেটিং এর প্রথম ধাপ হলো টার্গেট অডিয়েন্স সম্পর্কে সঠিক ধারনা রাখা। যেমন:- বই নিয়ে গড়ে ওঠা সাইট “রকমারী.কম” এর টার্গেটেড গ্রুপ, যারা বই পড়তে, বই নিয়ে জানতে অনেক বেশী আগ্রহী হবে। এখন এই টার্গেটেড গ্রুপে যদি চাল, ডাল বা ভোগ্য পণ্য নিয়ে মিম দেয়া হয়ে তবে তারা তেমন আগ্রহী হবে না।
একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে মিম গুলো অনেক বেশী সেলসি হবে না কিন্তু তা পণ্যের প্রমোশন ও এঙ্গেজমেন্ট এর মধ্যে ভারসাম্য রাখবে। চিন্তা করে বের করতে হবে ঠিক কোন বিষয়ে গ্রাহক নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাববে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে।
ট্রেন্ডিং টপিক এর ব্যবহার
ফেসবুক, টুইটার এবং টিকটক এসব সোশ্যাল প্লাটফর্মে নজর রাখলে বর্তমান ট্রেন্ড সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। ট্রেন্ড গুলো কাস্টমার রা কিভাবে নিচ্ছে, তা প্রোডাক্ট এর সাথে রিলেট করা যায় কিনা এই বিষয় গুলোর ওপর মিম বানানো সহজ।
সঠিক সময়ে, সঠিক টপিক কেন্দ্র করে মিম বানানো হলে তা সহজেই ভাইরাল হয়। তাই সব সময় যেকোন ভাইরাল টপিক নিয়ে জানা, এলার্ট থাকা মার্কেটার এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারন যেখানেই স্ক্যান্ডাল সেখানেই মিম।
ভাইরাল মিমস এর উদাহরণ
নিচে ভাইরাল কিছু মিম এর উদাহরনে দেখানো হলো জনপ্রিয় কোম্পানি গুলো তা কিভাবে মার্কটিং ট্রিকস হিসেবে ব্যবহার করেছে।
ডায়মন্ড এক্সপ্রেস ট্রাভেল
র্যাপার ড্র্যাক এর এই মিম টি তার লেটেস্ট এ্যলাবাম থেকে নেওয়া। মিউজিক ভিডিও এর ডান্সিং শট থেকে এই মিম টি তৈরী। অরিজিনাল মিম টি ছিল এরকম, যেখানে দুইটি অপশন আছে। প্রথম অপশন টিকে তিনি খুব অপছন্দ করছেন, এত অপছন্দ যে তাকাচ্ছেনই না, এর নিচে আছে আরেকটি অপশন, তিনি নিচের অপশনটিকে খুব পছন্দ করছেন আর খুব উৎফুল্য বোধ করছেন।
এই মিম টিকে ট্রাভেল এজেন্সি কোম্পানি উপস্থাপন করলো এভাবে, “নিজেই নিজের ভ্যাকেশন বুক করা” টা অপছন্দের অপশনে, “কোন ট্রাভেল এজেন্ট কে নিয়োগ দেয়া” টি পছন্দের অপশন।
হাইড্রপ. আই ও
এই মিম টি অনেক বার অনেক ভাবে ফিরে এসেছে। মিম টিতে দুইটি মেয়ে এবং একটি ছেলে কে দেখা যাচ্ছে। ছেলেটির সাথে একটি মেয়ে থাকা স্বত্তেও সে পিছনের মেয়েটির দিকে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে আছে।ইন্ডিয়ার একটি পানি কোম্পানি “হাইড্রপ আই ও” , তারা এই মিম টি ব্যবহার করে দেখিয়েছিল তাদের টার্গেট অডিয়েন্স রেগুলার পানিকে এভোয়েড করে তাদের কোম্পানির পানির নিয়ে কতটা আগ্রহী।
মিম মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি (বোনাস টিপ)
- মিম মার্কেটিং প্র্যাকটিস করতে হলে কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, এগুলো হলো
আক্রমনাত্মক মিম পরিহার
কখনও কখনও কোন ফান মিম কোন গ্রুপের জন্য আক্রমনাত্মক হয়ে উঠতে পারে। সেজন্য মিম আপলোড করার আগে ভালো করে চিন্তা করে নিতে হবে সেই মিম টি কারো জন্য অপমানজনক হবে কিনা।
ব্র্যান্ড প্রাসঙ্গিক মিম
মিম মর্কেটিং এর পুরো বিষয়টি হবে ব্র্যান্ড এর প্রমোশন কে কেন্দ্র করে। ইমজেটিকে অথেন্টিক এবং ব্র্যান্ডের সাথে সামন্জস্যপূর্ন করে বানাতে হবে, যেন এর স্টাইল, পার্সোনালিটি অন্য যেকোন কোম্পানির মিম থেকে আলাদা হয়।
অলিখিত কিছু মিম রুলস:
মিম একটি ফান হলেও এতে কিছু অলিখিত নিয়ম আছে যা মেনে চলতে হয়, এগুলো হলো
১. মিম এর লিখা সহজ আর ছোট রাখা।
২. মিম এর অরিজিনাল মিনিং ঠিক রাখা, নইলে অডিয়েন্স বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারে।
৩. মিম এ কল টু একশন বাটন ব্যবহার না করা।
পরিশেষে
ব্র্যান্ড দ্রুত অডিয়েন্সের দৃষ্টিগোচর করতে মিম মার্কেটিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। ক্রিয়েটিভিটি আর সিম্পল কিছু গাইডলাইন ব্যবহার করে খুব সহজেই গ্রাহককে প্রোডাক্টের প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায় মিম মার্কেটিং এর দ্বারা।