ইদানীং ইন্টারনেটের বদৌলতে কাস্টমারদের পণ্য সংক্রান্ত ব্রাউজিং এবং পন্য কেনার ধরন অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। আর স্বাভাবিক ভাবেই কোম্পানি গুলোর এডভার্টাইজিং পদ্ধতিও দিনকে-দিন পাল্টাচ্ছে। গ্লোবাল পেন্ডেমিকের ফলে ৪৩% অনলাইন শপিং বেড়ে যায়, যার ফলে বিজনেস গুলোর পাশাপাশি মারর্কেটাররাও কিন্তু লাভবান হন, কিভাবে?
কারন অনলাইন চ্যানেল গুলো ব্যবহারের ফলে তাদের হাতে চলে আসে ক্যাম্পেইন রিলেটেড প্রচুর ডাটা। ক্যাম্পেইন রান করানোর পর একজন মার্কেটার ২৪ ঘন্টার পুরো রেজাল্ট কে একত্রে এনে তার থেকে বিভিন্ন ম্যাট্রিক্স বের করতে পারেন; অফলাইন মার্কেটিং এ যেটাকে প্রায় অসম্ভব বলেই ধরে নেয়া হয়। তাহলে চলুন জেনে নেই পারফর্মেন্স মার্কেটিং কে পারফর্ম করার উপযোগী করার বেশ কিছু পদ্ধতি ও ধরণ ইত্যাদি।
পারফর্মেন্স মার্কেটিং কি?
অনলাইন ক্যাম্পেইন গুলোর জন্যই মূলত পারফর্মেন্স মার্কেটিং এর উদ্ধব। আর এখানে মজা টা হলো একটি এডভার্টাইজার কোম্পানি তখনি মার্কেটিং কোম্পানিকে পে করবে যখন ক্যাম্পেইন টা রেজাল্ট আনবে। ঠিক খেলায় হার-জিত টাইপ ব্যাপার, তাইনা?
এডভার্টাইজার কোম্পানির নানা ধরনের চাহিদা থাকতে পারে; ক্লিক বা কনভার্শন বাড়ানো, রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানো, সেল বা লিড বাড়ানো ইত্যাদি। তাই পারফর্মেন্স মার্কেটিং এ স্পেসিফিক ভাবে কাস্টমারকে দিয়ে একশন করানোতেই ফোকাস করা হয়।
জ্বি, আপনার লিড কে কোম্পানির সাথে কম-বেশী এঙ্গেজ করানোটাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তারপর এই একশন বা এঙ্গেজমেন্ট কে নিয়ে অংক কষা এবং একে সঠিক ভাবে ট্র্যাক করা, আর সবশেষে এই অংক গুলোর উপর ভিত্তি করে এডভার্টাইজার কোম্পানিরা তদের কাজ শেষ করে।
বড় বড় কোম্পানি গুলো যেখানে ব্রান্ডিং এর জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে ফেলে সেখানে অনেক কোম্পানিই বিজনেস এর লাস্ট আর গুরুত্বপূর্ণ স্টেজ অর্থাৎ প্রফিট বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেয় বেশী। আর পারফর্মেন্স মার্কেটিং এর জন্য এই ভারিক্কি কর্মযজ্ঞ কে ছেড়ে দেয়া হয় মার্কেটার এর হাতে। তাতে করে বিজেনেস গুলো আগে ফলাফল দেখে আর তারপর পে করে।
পারফর্মেন্স মার্কেটিং গণনা
পারফর্মেন্স মার্কেটিং ক্যাম্পেইন সাজানোর আগেই কেপিআই বা কি-পারফর্মেন্স-ইনিডিকেটর ঠিক করে নিতে হয়। কেপিআই অনুসারে অডিয়েন্সের প্রতিটি একটিভিটি বা একশন কে গণনা করা, রিপোর্ট করা, এবং এনালাইজ করার মাধ্যমে মার্কেটিং পারফর্মেন্স বা রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট নির্ণয় করা হয়।
নিয়মিত আর.ও.আই ট্রাক করার মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সফলতা অনেকটাই নীহিত। আর বিভিন্ন পারফর্মেন্স অপটিমাইজেশন টুল তো আছেই। তবে হ্যা; ক্যাম্পেইন রান করার পর এই টুল গুলোকে ডাটা সংগ্রহ করার জন্য সময়ও দিতে হবে।
কারন ডাটা যত বেশী থাকবে, ততোই ডিপ ইনসাইট পাওয়া যাবে এবং তা ততোধিক ভাল ও কার্যকরী উপায়ে বিজনেসে ব্যবহার করা যাবে। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক কিছু “কি-মেট্রিক্স” যা ব্যবহৃত হয় পারফর্মেন্স মার্কেটিং এ।
CPM
একটি ডিজিটাল এড রান করার পর প্রতি হাজার ইম্প্রেশনের বিপরীতে কোম্পানিকে পে করতে হয় আর একেই Cost Per Mille বা Cost Per Thousand বলে। যদিও সি.পি.এম অডিয়েন্সের একশন নেয়ার ওপর নির্ভর করে তাদের প্রাইস ঠিক করে না, বাট এর প্রাইস ঠিক হয় একটি এ্যাড কতোজন মানুষকে দেখানো হলো তার ওপর ভিত্তি করে। পারফর্মেন্স মার্কেটাররা তাই সি.পি.এম নিয়ে তুলনামূলক কম কাজ করেন।
CPC
একটি এ্যাডে যতবার কনজিউমাররা ক্লিক করবে সেই অনুপাতে পারফর্মেন্স মার্কেটার কে পে করা হবে, আর একেই বলে কস্ট পার ক্লিক বা সি.পি.সি। সি.পি.এম এর তুলনায় সি.পি.সি একটি ভাল কি-ইন্ডিকেটর। উদাহরন হিসেবে নেই একটি লাক্সারি গাড়ির ব্র্যান্ড কে, এই ব্র্যান্ড টির কস্ট পার ক্লিক অবশ্যই অনেক বেশী হবে কারন এর টার্গেট অডিয়েন্স রা রিচ। এতে করে কস্ট পার ক্লিক তো ব্যয়বহুল হবেই বাট বিলাসবহুল গাড়ি কোম্পানিটির পটেনশিয়াল রিটার্ন ও হবে অনেক হাই।
CPA
কস্ট পার একশন কে সংক্ষেপে বলে সি.পি.এ, যেহেতু এখানে একশন শব্দটি আছে তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কনজিউমার রা যদি ক্যাম্পেইন এর প্রতি কোন একশন গ্রহন করে তখনি এর ব্যয় নির্ধারন করা হবে। যেমন: কোনো ই-বুক ডাউনলোড করা, সাবস্ক্রাইবার দের সাইন-আপ করানো, বা কোন আইটেম কেনানো। পারফর্মেন্স মার্কেটিং এ কাস্টমারদের গৃহীত একশন গুলোই স্পষ্ট আর গণনাযোগ্য রেজাল্ট দেয় বলেই সি.পি.এ কে গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় ইন্ডিকেটর হিসেবে ধরা হয়।
LTV
এল.টি.ভি বা লাইফটাইম ভ্যালু, এটি এমন একটি ইন্ডিকেটর যা একজন কাস্টমারের ব্র্যান্ড বা কোম্পানির সাথে পুরো লাইফটাইম এর রিলেশনশিপের ম্যাট্রিক্স বের করে। এতে প্রিডিক্টিভ এনালিটিক্স এর মতো এডভান্স মেথড ব্যবহার করা হয়, যার ফলে কাস্টমারের চলমান এক্টিভিটি কে গণনা করে ব্যয় নির্ধারন করা হয়। এল.টি.ভি মার্কেটার দের ওভারোল স্ট্রেটিজি প্ল্যান করায় ব্যবহার হয় বলে এটি দিনকে-দিন প্রচুর জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
পারফর্মেন্স মার্কেটিং স্ট্র্যাটিজি
পারফর্মেন্স মার্কেটিং এর জন্য বিভিন্ন মার্কেটিং চ্যানেলের ব্যবহার এবং নানান ক্যাম্পেইন সাজানো হয়। তবে যেকোন পারফর্মেন্স মার্কেটিং স্ট্রেটিজি সেট করার জন্য কিছু বেসিক স্টেপ ফলো করতে হয়। এদেরকে ক্যাম্পেইন মার্কেটিং এর গাইড হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।
প্রথমেই ক্যাম্পেইন গোল সেট করা
একটি ক্যাম্পেইন কতোটুকু সফল এবং কতোটুকু বিফল তা বের করার জন্য অবশ্যই একটি গোল সেট করা জরুরী। পারফর্মেন্স মার্কেটিং লঞ্চ করার আগেই আপনাকে ভেবে নিতে হবে আপনি কোম্পানির জন্য এখন কি চান; হতে পারে আপনি ব্র্যান্ড এওয়ারনেস বাড়াতে চান আবার হতে পারে আপনি প্রোডাক্ট বিক্রির জন্য ক্যাম্পেইন রান করতে চান।
এই কাজ কে আরো সহজ করতে অনেক এ্যাড প্লাটফর্ম এ্যাড বা ক্যাম্পেইন সেট করার আগেই গোল ঠিক করে নেয়ার রিকোয়ারমেন্ট ফিল-আপ করতে বলে। আপনার এ্যাড টি কোথায় শো করবে, কাদের কাছে শো করবেে এগুলোর ওপর ভিত্তি করেই ক্যাম্পেইন গোল নির্ধারণ করা হয়।
জনপ্রিয় কিছু মার্কেটিং গোলস হলো:
১ঃ ব্র্যান্ড এওয়ারনেস
২ঃ ওয়েবসাইট ট্রাফিক
৩ঃ রি-টার্গেটিং
৪ঃ এঙ্গেজমেন্ট
৫ঃ লিড জেনারেশন
৬ঃ সেলস বা বিক্রয় বৃদ্ধি।
ডিজিটাল চ্যানেল সিলেক্ট করা
পারফর্মেন্স মার্কেটিং এর জন্য কয়েকটি মার্কেটিং চ্যানেল এর ব্যবহার করাটা বেস্ট প্রেকটিস। তাতে ক্যাম্পেইন এর রিচ যেমন বাড়ে তেমন সফলতার চান্স ও বাড়ে। হতে পারে এফিলিয়েট মার্কেটিং, ন্যাটিভ এডভার্টাইজিং; যে ধরনের পারফর্মেন্স মার্কেটিংই ঠিক করা হোক না কেন এমন চ্যানেল আপনাকে খুজে বের করতে হবে যেখানে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স দের অধিক বিচরণ।
ক্যাম্পেইন তৈরী ও লঞ্চ করা
পারফর্মেন্স মার্কেটিং এর ক্যাম্পেইন তৈরীতেই অনেকটা সময় চলে যায়; টার্গেট অডিয়েন্স দের চিহ্নিত করা, তাদের সমস্যা ও চাহিদা গুলো বোঝা, এ্যাড’স সাজানো এবং সবশেষে তাদের এটেনশন পাওয়া।
আপনি যত ভালো করে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কে বুঝবেন এবং আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস তাদের কিভাবে সাহায্য করবে তা জানবেন ততো ভালোভাবে আপনার এ্যাড এর ইমেজ, হেডলাইন, ডিজাইন, এবং শিডিউল ঠিক করতে পারবেন। আর হ্যা, ক্যাম্পেইন এর ট্যাকনিকাল বিষয়গুলো যেমন এ্যাড সাইজ, ক্যারেক্টার লিমিট, ইমেজ সাইজ এগুলো ভিন্ন মার্কেটিং প্লাটফর্মের জন্য ভিন্ন হয়ে থাকে।
ক্যাম্পেইন অপটিমাইজ করা
আসল কাজটা কিন্তু এখন, একটি পোস্ট বা এ্যাড লঞ্চ করার পর। ঠিক যখন থেকে ক্যাম্পেইন টা রান করা হয় তখন থেকেই পারফর্মেন্স ক্যাম্পেইন ডাটা জেনারেট করতে শুরু করে। আর তখন মার্কেটারের কাজ হলো পৃথক পৃথক ক্যাম্পেইন এর পারফর্মেন্স কাউন্ট করা।
এনালিটিক্স গুলোকে ট্র্যাক করা; ট্রাফিক ও পারফর্মেন্স এর ওপর ভিত্তি করে মেট্রিক্স বের করা এবং এ্যাড এর ব্যয় নির্ণয় করা। আপনি শুধু সেলস বাড়ানোর জন্যই নয় বরং আপনার পণ্যের জন্য বেস্ট মার্কেটিং চ্যানেল কোনটি, অডিয়েন্স, রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট বের করার জন্যও ব্যবহার করতে পারেন।
সমস্যার সমাধান করা
প্রত্যেক মার্কেটিং ক্যাম্পেইন এর মতোই এখানেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ বা সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়, যেমন
১ঃ ব্র্যান্ড সেফটি
২ঃ প্রাইভেসি ইস্যু
৩ঃ বট ট্রাফিক
৪ঃ ক্লিক ফ্রড বা পাবলিশার ফ্রড
আর এ সব ঝামেলা না হবার জন্য আপনাকে বেছে নিতে হবে হাই-কোয়ালিটি এডভার্টাইজিং নেটওয়ার্ক বা প্লাটফর্ম।
পারফর্মেন্স মার্কেটিং এর ধরন
এডভার্টাইজার কোম্পানি গুলো পারফর্মেন্স মার্কেটিং এর জন্য একটি বা একের অধিক মার্কেটিং চ্যানেল ব্যবহার করতে পারেন। ই-কমার্স বিজনেস এর জনপ্রিয় কিছু মাধ্যম হলো:
এফিলিয়েট মার্কেটিং: এডভার্টাইজার কোম্পানির সাথে পার্টনারশিপে বা এফিলিয়েশন এর মাধ্যেমে এ ধরনের মার্কেটিং করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কুপন, লয়েলিটি, ইত্যাদির চুক্তি দ্বারা ইউটিউবার, ব্লগারদের নিয়ে কাজ করা হয়।
ন্যাটিভ এডভার্টাইজিং: এটি এমন একটি পেইড মিডিয়া যা সরাসরি “ব্যানার এডস” এর মতো দেখায় না। নিউজ বা সোশাল সাইট গুলোতে এ ধরনের এ্যাড দেয়া হয়। এগুলো একদম সাধারন বা ন্যাটিভ ভাবে বসানো হয় বলেই একে নেটিভ এ্যাডস বলা হয়।
পেইড এডস: যখন একজন এডভার্টাইজার স্পন্সর এডস এর জন্য পে-পার-ক্লিক চুক্তি তে এড রান করায় তাকেই পেইড সার্চ মার্কেটিং বলে। বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে ( গুগল এডস, বিং, ইয়াহু) তে এই এড গুলো দেয়া হয়।
পারফর্মেন্স মার্কেটিং এক্সাম্পল
One&Done- ভিডিও ক্লিপ এ্যাডস: এটি একটি ফিটনেস ট্রেইনিক সেন্টার যা পারফর্মেন্স ক্যাম্পেইনে নেটিভ ভিডিও নিয়ে কাজ করেছিল। তারা ভিডিও টিতে কল-টু-একশন বাটন যুক্ত করে। এর এই নেটিভ ভিডিও টি তাদের কে অনেক ভাল কে.পি.আই এনে দিতে সক্ষম হয়। মাত্র দুই মাসের মাথায় এই কোম্পানিটি ৩,৯০০ পেইড সাবস্ক্রাইবার পায় এবং এ্যাড স্পেন্ড এর ৩০% রিটার্ন তুলতে সক্ষম হয়।
VAVAVOOM- ইউটিউব ভিডিও ক্যাম্পেইন: এই কোম্পানিটি একটি গ্লোবাল ফ্যাশন রিটেইলার কোম্পানি। তারা ইউটিউব ভিডিও কে টার্গেট করে ক্যাম্পেইন টি সাজেয়েছিল যার রিটার্ন অন এ্যাড স্পেন্ড ছিল ১০:১। আর মাত্র এগারো সপ্তাহে তারা প্রায় তিন লাখ মানুষকে এঙ্গেজ করতে সক্ষম হয়েছিল।
পরিশেষে
ব্র্যান্ড এওয়ারনেস থেকে শুরু করে কনভার্শন রেইট সবকিছুকেই পারফর্মেন্স মার্কেটিং ক্যাম্পেইন দ্বারা গণনা করা যায়। তাতে করে এডভার্টাইজিং গুলোতে স্বচ্ছতা যেমন বৃদ্ধি পায়; তেমনি এডভার্টাইজারদের স্ট্র্র্যাটিজি গুলোও আরো স্পেসিফিক হয়। আর পারফর্মেন্স মার্কেটিং এর জন্ম টাও ক্যাম্পেইনকে আরো বাস্তবধর্মী ও এডভান্স করার প্রয়োজন থেকেই হয়েছিল; তাই কোম্পানি মালিক বা একজন মার্কেটার হিসেবে আপনার উচিৎ এখনি পারফর্মেন্স মার্কেটিং নিয়ে কাজ শুরু করা।