ভাইরাল মার্কেটিং কি? (Viral Marketing) ভাইরাল মার্কেটিং এর আদ্যোপান্ত

সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুল পরিচিত একটি শব্দ “ভাইরাল”, অর্থাৎ কোন পন্য বা সেবা নিয়ে তথ্য যখন ইন্টারনেটে অনেক শেয়ার হয়, অনেক মানুষ তা নিয়ে জানে তাই “ভাইরাল” আখ্যা পায়। তো চলুন জেনে নেয়া যাক, ভাইরাল মার্কেটিং কে কিভাবে মার্কেটিং ট্রিকস হিসেবে আমরা কাজে লাগাতে পারি।

ভাইরাল মার্কেটিং কি?

 

মার্কেটিং এর অর্থে, ভাইরাল শব্দটি দ্বারা বোঝায় এমন কিছু যা খুব দ্রুত পুরো বিশ্বের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ে। তবে হ্যা’ এই মার্কেটিং এর পুরোটাই করতে হয় অর্গানিক উপায়ে। এটি বিজনেস টু কনজিউমার কোম্পানি গুলোর জন্য কার্যকর। ইউটিউব, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, ফেইসবুক ইত্যাদি সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলো ভাইরাল মার্কেটিং এ কাজে লাগে।

 

সোশাল মিডিয়ায় মর্ডান ভাইরাল মার্কেটিং গুলোকে জনপ্রিয় মিমস বলা যায়। এটি একটি প্রোডাক্ট কে কেন্দ্র করেই যে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে এমন নয়, যখন মিমস গুলো অনেক দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পরে তখন এটি ভাইরাল আখ্যা পাওয়ার জন্য যথেষ্ঠ। ফলোয়ার এবং কাস্টমার রা একটি ব্র‌্যান্ড কন্টেন্ট শেয়ার করে তা ভাইরাল করতে পারে।

ভাইরাল মার্কেটিং এর বৈশিষ্ট্য

যেকোন কন্টেন্ট কে ভাইরাল করা খুব সহজ নয়, কোন কন্টেন্ট ফলোয়াররা কিভাবে গ্রহন করবে তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে এর ভাইরাল হওয়া বা না হওয়া। তো চলুন জেনে নেয়া যাক ভাইরাল মার্কেটিং এর আরো কিছু বৈশিষ্ঠ্য।

কমন উপাদান

যেকোন ভাইরাল মার্কেটিং এর কমন উপদান থাকে তিনটি। ম্যাসেজ, ম্যসেন্জার, এবং পরিবেশ। একটি ভাইরাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন এর জন্য প্রত্যেকটি উপাদান ই প্রয়োজনীয়। বড় বা ছোট যেকোন বিজনেস এর জন্য ভাইরাল মার্কেটিং করা যায়। 

ভিন্ন ভিন্ন টুলস

ভাইরাল মার্কেটিং এর ক্যাম্পেইন গুলোর জন্য বিভিন্ন টুলস রয়েছে। যেমন ভিডিও, ইমেজ, গেইম, ইমেইল, টেক্সট মেসেজ কিংবা ফ্রি প্রোডাক্ট অফার ইত্যাদি ব্যবহার করে গ্রাহকের ইমোশন তৈরি করা হয়। যা একটি কন্টেন্ট এর লাইক, কমেন্ট, এবং শেয়ার বৃদ্ধি করে। আবার কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, সোশাল মিডিয়ায় যাদের নেটওয়ার্ক বা ফলোয়ার অনেক বেশী তাদের সাহায্য নেয়। 

দ্রুততা

ফোরস মাল্টিপ্লাইয়ার এর কারনে ভাইরাল মার্কেটিং, ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এর চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত গতির হয় আর এর খরচ অল্প। যেহেতু এটি কম সময়ে অনেক বেশী ট্রাফিক নিয়ে আসতে পারে, তাই খুব সহজে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এটেনশান পেয়ে থাকে। 

ভাইরাল মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে

থিওরিটিক্যালি বলতে গেলে ভাইরাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন খুব সিম্পল। আপনাকে যেকোন ধরনের ভিডিও বা লিখিত কন্টেন্ট বানাতে হবে, যা টার্গেট অডিয়েন্সের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারবে এবং এর প্রমোশন করতে হবে। তারপর অপেক্ষা করতে হবে যেন অডিয়েন্স একে অনেক বেশী শেয়ার করে। 

 

মাঝে মাঝে কোন পোস্ট বাই এক্সিডেন্ট ও ভাইরাল হতে পারে। যখন কোন ইউজার প্রাইভেট ভাবে কিছু আপলোড করে তখন তা হঠাৎ করেই ভাইরাল হওয়ার উদাহরনও আছে। ভিজিবল ( যেখানে স্পষ্ট বোঝা যায় এটি কোনো কোম্পানির এড) এবং কনসিলড ( যেখানে অস্পষ্ট ভাবে মার্কেটিং করা হয়) এ দুই ধরনের ক্যাম্পেইন এর মধ্যে কনসিলড মেথডটি ভাইরাল মার্কেটিং এর জন্য ব্যবহৃত হয়। কারন কাস্টমার রা কনসিলড ক্যাম্পেইন টিকে নিজেদের বাস্তব জীবনের সাথে রিলেট করতে পারে এবং একে মার্কেটিং ট্রিকস ভাবে না। ভাইরাল মার্কেটিং এর বেস্ট স্ট্র‌্যাটিজি টি হলো পোস্ট কে একটি সঠিক স্পেছ এবং সময় দেয়া যাতে তা নিজেই নিজেই ভাইরাল হয়।

ভাইরাল মার্কেটিং এর শুরুটা

বড় বা ছোট যেকোন ব্রান্ড, তাদের ব্রান্ড অথোরিটি বাড়াতে ভাইরাল মার্কেটিং এর বিভন্ন ট্রিকস ব্যবহার করে উপকৃত হতে পারে। এতে লক্ষ রাখা যায় অডিয়েন্স রা কি পরিমান রিয়েক্ট করছে এবং টার্গেট অডিয়েন্স এর পছন্দনীয় বিষয় সম্পর্কে। এখানে ভাইরাল মার্কেটিং এর কিছু টিপস দেয়া হলো যা ফলো করে শেয়ারেবল কন্টেন্ট, সোশাল মিডিয়ার গড় ভিজিবিলিটি বাড়াতে পারে।

সোশাল মিডিয়া রিপোর্ট 

সোশাল মিডিয়া এনালিটিক্স বা রিপোর্ট গুলো নিয়মিত এনালাইসিস করতে পারলে খুব সহজে অডিয়েন্সের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে ধারনা পাওয়া যায়। আবার কিছু সোশাল মিডিয়া মেট্রিক্স ব্যবহার করেও কন্টেন্ট এর পার্ফমেন্স সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। যেমন:

 

  • কাস্টমার এঙ্গেজমেন্ট
  • কিওয়ার্ড ট্রাফিক
  • পেইজ ইম্প্রেশান
  • ক্লিক এবং রিচ
  • ডেমোগ্রাফিক ডাটা।

ভ্যালুয়েবল কন্টেন্ট

ভাইরাল মার্কেটিং এর জন্য একটি কন্টেন্ট কে এমন ভাবে সাজাতে হবে যেনো তা সহজেই শেয়ার করা যায়। তার সাথে বুঝতে হবে ঠিক কোন সোশাল মিডিয়া সাইটে ক্যাম্পেইন টি ভাইরাল হতে পারে এবং বিজনেস এর টার্গেট অডিয়েন্স ঠিক কোন সোশাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশী সময় কাটায়। শেয়ারিং কে সহজ করতে কিছু ট্রিকস ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন

 

  • কন্টেন্ট শেয়ারের জন্য বিভিন্ন অপশন এভেইএবেল রাখা।
  • ফ্রি প্রোডাক্ট বা সেবা অফার করা।
  • মেইন অডিয়েন্স এর মেইন মোটিভেশান খুজে বের করা।
  • এমন কোন প্রশ্ন করা, য নিয়ে টার্গেট অডিয়েন্স রা কথা বলতে চিন্তা করতে আগ্রহী হয়।
  • কন্টেন্ট কখনো কোন ইউজারের রেস্ট্রিকড না করা।

হ্যাসট্যাগ এর ব্যবহার

যেকোন মার্কেটিং ক্যাম্পেইন এর জন্য হ্যাসট্যাগ এর ব্যবহার খুব গুরুত্বপূর্ন। সেই সাথে এটি খুব স্মার্ট মুভ ও বটে, গ্রাহকের চোখে পড়া এবং মনে রাখার জন্য। তবে হ্যা, ভাল হ্যাসট্যাগ খুজে বের করার জন্য মার্কেটার কে তার অডিয়েন্স সম্পর্কে ভাল ধারনা রাখতে হবে। নেটে অনেক হ্যাসট্যাগ পাওয়া যায় যা একেক সময় একেক পোস্টের সাথে আপলোড করে বেস্ট হ্যাসট্যাগ সহজেই খুজে বের করা যায়। 

ভাইরাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন কে ভাইরাল করার উপায়

কোন মার্কেটিং ক্যাম্পেইন কে ভাইরাল করার প্ল্যান গ্রহন করলে, তা কিছু নিয়ম অনুসারে সাজালে খুব ভাল সাড়া পাওয়া যায়। যেমন

 

  • কাস্টমারের ইমোশন এর ব্যাপারে খেয়াল রাখা।
  • ট্রেডিশনাল এড এর চেয়ে ভিন্ন বা ক্রিয়েটিভ কোনো এড সাজানো। 
  • একটি ক্যাম্পেইন করেই থেমে না যাওয়া, রেগুলার কাস্টমার কে এঙ্গেজ রাখতে কিছুদিন পরপর ক্যাম্পেইন চালানো
  • ভুল বা অসত্য তথ্য নিয়ে ক্যাম্পেইন না চালানো। কারন ক্রেতার সাথে স্বচ্ছ সম্পর্ক রাখাটা খুব জরুরী। 
  • স্পন্সর কমিউনিটির সাহায্য নেয়া

ভাইরাল মার্কেটিং এর সুবিধা ও অসুবিধা

ভাইরাল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করার ফলে একটি কোম্পানি নতুন মার্কেটে প্রবেশের সুযোগ পায় এবং এর নতুন কাস্টমার বেইস তৈরী হয়। ক্রিয়েটিভ কিছুকে ভাইরাল মার্কেটিং এর জন্য ক্যাম্পেইন করা গেলে ভাইরাল রেসপন্স পাওয়া যায়। 


মাঝে মাঝে পজিটিভ মার্কেটিং এর মতো, নেগেটিভ কোন তথ্য ভাইরাল হয়ে যেতে পারে যা কোম্পানিটির জন্য সমস্যা কারন হয়ে দাড়ায়। আবার একজন কাস্টমার যদি ভাবেন ভাইরাল কন্টেন্ট টি শেয়ার করলে তার প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি হুমকির মুখে পড়তে পারে তবে তা শেয়ার করার সম্ভাবনাকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। ভাইরাল মার্কেটিং এর কিছু সুবিধা হলো

 

  • ভাইরাল কন্টেন্ট অনেক কাস্টমারের কাছে রিচ করে।
  • দ্রুত কাস্টমার গ্রোথ।
  • কম খরচ।

ভাইরাল মার্কেটিং এর কিছু অসুবিধা গুলো হলো

 

নেগেটিভ তথ্য ভাইরাল।

অধিকাংশ ক্যাম্পেইনই ভাইরাল না হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

পরিশেষে

ভাইরাল মার্কেটিং খুব কার্যকারী একটি টেকনিক, স্বল্প সময়ে ব্র‌্যান্ড বা প্রোডাক্ট এর প্রমোশন করার জন্য। ভাইরাল মার্কেটিং  এ অডিয়েন্স খুব গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করে বলে এর ফলাফল কেমন হবে তা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। সাক্সেসফুল ভাইরাল মার্কেটিং একটি কোম্পানিকে নতুন কাস্টমার আনতে সাহায্য করে সেই সাথে রিভিনিউ অনেক পারিমান বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই একজন মার্কেটারকে খুব ভেবে চিন্তে প্লার্টফর্ম নির্ধারন করার পর মার্কেটিং ক্যাম্পেইন সাজাতে হয়। যদি তা না করা হয় তবে ভাইরাল মার্কেটিং সুবিধার চেয়ে অসুবিধা ই বেশী বয়ে আনতে পারে।

 

Share:

More Posts

Best Uses of LinkedIn Search – Part 1

বিক্রয়কর্মী হিসাবে, আপনার কাজ সম্ভাব্য কাস্টোমার খুঁজে বের করা এবং সেগুলোকে লিড হিসেবে নির্বাচন করা। এক বিলিয়ন সদস্যসহ, লিংকডইন আপনার মাছ ধরার জন্য মাছে ভরা

LinkedIn Marketing

‘বাস্তবে অনেক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী আছেন যারা কোল্ড কল ঘৃণা করে এবং তাদের উত্তর দিবেন না। লিঙ্কডইন হল তাদের কাছে পৌঁছানোর চাবিকাঠি।’   সম্প্রতি একটি বৈশ্বিক

কিভাবে লিঙ্কডিন (Linkedin) ব্যাকগ্রাউন্ড/ব্যানার ইমেজ তৈরি করবেন?

সুপারিশকৃত ছবির আকার – ১৫৮৪ x ৩৯৬ আপনার প্রোফাইল ছবির পিছনে আপনার লিঙ্কডইন ব্যাকগ্রাউন্ড / ব্যানার রয়েছে, যা লিঙ্কডইন প্রোফাইলগুলির সর্বাধিক ব্যবহৃত অংশগুলির মধ্যে একটি। 

লিঙ্কডিন (Linkedin) প্রোফাইল ফটো টিপস সম্পর্কে জানতে চান!

আপনার পিছনে একটি সমতল পটভূমি রয়েছে। এটি আপনাকে বিস্তৃত করবে, যেখানে একটি বিশৃঙ্খল পটভূমি আপনার থেকে ভিউয়ারকে বিভ্রান্ত করবে। যদি সম্ভব হয় তবে লিঙ্কডিন ব্যাকগ্রাউন্ডের

Send Us A Message